বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিল্পপতির ছেলের রাজকীয় বিয়ের আয়োজন

বর-কনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম তাজমহল। প্রায় পাঁচ হাজার অতিথিদের জন্য থরে থরে সাজানো রয়েছে চেয়ার-টেবিল। ডেকারেশন শ্রমিক, বাবুর্চি ও অতিথিদের অভ্যর্থনার কাজে তিন শতাধিক মানুষ কাজে ব্যস্ত। দেখে মনে হচ্ছে বিলাসবহুল কোনো কমিউনিটি সেন্টারে রাজকীয় এক বিয়ের আয়োজন। 

রাজকীয় এ আয়োজনটি কোন কমিউনিটি সেন্টারে নয়, এটি নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় অ‌্যান্ড কলেজের ভিতরে। বিদ্যালয়ের মধ‌্যে এমন আয়োজনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সৈয়দপুরবাসী।

করোনাকালীন বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় সৈয়দপুরের বিশিষ্ট শিল্পপতি আলতাফ হোসেনের ছেলের বিয়ের বৌভাতের আয়োজন করা হচ্ছে সেখানে। কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার ‘শাহজাহান ইভেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আয়োজনের কাজ করছে। সব আয়োজন প্রায় শেষ। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটায় শুরু হবে রাজকীয় বৌভাতের অনুষ্ঠান।

সৈয়দপুরবাসীর অভিযোগ, করোনার সময়ে সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেছে। আর এ সময়ে বিদ্যালয়ের ভিতরে ৭/৮ হাজার মানুষের আয়োজন। এতে করোনার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শহরের বিশিষ্টজনরা বলছেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনাকালীন কীভাবে জনসমাগমের আয়োজন করা হলো? এতে একদিকে যেমন করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচেতনতা উপেক্ষিত হচ্ছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, ফুল বাগানসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতিসাধনও হবে নিশ্চিত। এছাড়া ‘অতিথি নিয়ন্ত্রণ আইন’ লঙ্ঘিত হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা।

আয়োজক বিশিষ্ট শিল্পপতি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘অতিথির সংখ্যা অনুযায়ী কমিউনিটি সেন্টারে জায়গা না হওয়ায় স্বাস্থবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের অবগত করে এ আয়োজন করা হয়েছে।’

সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় অ‌্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আহসান হাবিব বলেন, ‘করোনায় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা ইয়াসমিন বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাক্তিগত অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়মের মধ্যে কখনই পড়ে না। এ ধরনের কোনো লিখিত আবেদন আমাদের কাছে কেউ করেনি।’

সৈয়দপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘পৌরসভার কাছে ওই বিয়ের আয়োজনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।’

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ বলেন, ‘এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা আইন বহির্ভূত।’