ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভালোবাসার দিনে জারবেরা আজিজের মুখে হাসি

শাহীন আনোয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৯:৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ভালোবাসার দিনে জারবেরা আজিজের মুখে হাসি

ধান বা ফলের গাছ বাদ দিয়ে ফুলের চাষ শুরু করেছিলেন আব্দুল আজিজ। তাও আবার বিদেশি ফুল। এ নিয়ে এলাকার মানুষ হাসাহাসি করতেন। বলতেন নানা কথা। কিন্তু সেইসব ভ্রুকুটি কানে না তুলে  আজিজ কাজে মন দিয়েছিলেন। 

কালে কালে গড়িয়েছে বেশ সময়। আব্দুল আজিজের সেই বাগানে এখন বাহারি রঙের ফুল হাসে। সেই হাসিতে দিনে দিনে দীর্ঘ হয় আব্দুল আজিজের প্রশান্তির হাসি।  বহু মানুষের হাসি-আনন্দের উপলক্ষ তৈরি হয় আজিজ মিয়ার বাগানের ফুলে। 

মাগুরার আজিজ মিয়া এখন সফল জারবেরা ফুল চাষি। ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাগুন উপলক্ষে গত এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন তিনি। নিজের নামের আগে স্থায়ী হয়েছে  ‘জারবেরা’ শব্দটি। আব্দুল আজিজ অনেকেই আছেন। জারবেরা আজিজ একজনই, এই নামে সবাই চেনেন তাকে। আব্দুল আজিজের বাড়ি মাগুরা শহরতলীর বেলনগর গ্রামের নতুন পাড়া এলাকায়।

আব্দুল আজিজ জানান, তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ২০১৬ সালে নিজের বাড়ি বেলনগরে চলে আসেন। বেকার বসে না থেকে কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। ঢাকার এক বন্ধুর পরামর্শে জারবেরা ফুলের চাষ শুরু করেন।

২০ শতাংশ জমিতে শুরু করা জারবেরার আবাদ এখন দুই একর জমিতে ছড়িয়েছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় আরও এক একরে চাষ সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।

আজিজের জারবেরার প্রধান বাজার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ফুলের বাজার। এরপর সিলেট ও চট্রগ্রামের বাজারে যায় তার ফুল। ব্যাপারিরা সরাসরি বাগান থেকে এসে নিয়ে যান। কেউ অগ্রিম টাকা পাঠিয়ে অর্ডার করেন। মাগুরা থেকে ফুল তুলে দেওয়া হয় বাসে।

লাল, সাদা ও গোলাপি জারবেরার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সপ্তাহে একবার ফুল সংগ্রহ করা হয়। একটি ফুলের পাইকারি দাম ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি হাজার ফুল ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ১০০টি ও ৫০০টি করে জারবেরা ফুলের তোড়া বেঁধে  বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভালোবাসা ও পয়লা ফাগুন  দু’টি উপলক্ষকে সামনে রেখে বেলনগর নতুন পাড়ার আজিজ ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করে আঁটি বাঁধছেন শ্রমিকেরা। গাছের পরিচর্যা ও সংগ্রহসহ নানা কাজে ৩০ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। তাদের দৈনিক মজুরি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

চার বছর থেকে ধরে লাল, হলুদ, সাদা ও গাঢ় লাল রঙের জারবেরা চাষ করে মানুষের দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। এখন জারবেরা ফুলের ব্যাপক চাহিদা মাথায় রেখে তিনি পরিচর্যা ও বাজারজাত করেছেন। উৎপাদন ভালো হচ্ছে। এ ফুলের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

বাগানের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন জানান, এখন সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে। প্রতি বছর বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, জন্মদিন, বিয়ে, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে এ ফুলের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। দেশের জারবেরা ফুলের চাহিদার একটা বড় অংশ তাদের বাগান থেকে যায় বলে তিনি জানান।

বাগানে ফুল কিনতে আসা ঢাকার ফুল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়া জানান, দশ হাজার ফুলের চাহিদা থাকলে পাচ্ছি চার হাজার। ক্রেতা-চাহিদা দুই-ই বেশি থাকায় ফুল পাচ্ছি না। দেশের মধ্যে মাগুরার জারবেরার মান খুবই ভালো।

ফুল বাগানে কাজ করছেন শাহাদৎ হোসেন। তিনিসহ  আরও তিন শ্রমিক জানান, বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভোর থেকে বাগানেই জারবেরা কেটে ফুলের তোড়া বাঁধেন তারা। বিকেল ৫টায় বাজারজাতকরণ পর্যন্ত কাজ করেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আক্কাস হোসেন মোল্লা জানান, বিদেশি এ ফুলের বাগান গড়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন আব্দুল আজিজ। তার সাফল্য দেখে বেলনগর গ্রামের হেকমত আলী, আছাদুল ইসলাম ও শামীম হোসেনসহ আরও অনেক বেকার যুবক এখন এ ফুল চাষ শুরু করেছেন। তারা ফুল চাষে আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল করতে অবদান রাখছেন।

বেলনগর সমাজ কল্যাণ সংস্থার পরিচারক ফরহাদ হোসেন জানান, ফুলের বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ দিবসগুলোয় ফুলের চাহিদা বাড়ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি একই দিন ভ্যালেন্টাইস ডে বা ভালোবাসা দিবস এবং পয়লা ফাল্গুন। একদিনে উদযাপনের জন্য দু’টি উপলক্ষ পেয়েছে বাঙালি। দু’টি উপলক্ষেই চাহিদা বাড়ে ফুলের, আর তাতে ব্যস্ততা বাড়ে ফুলচাষিদের। রমণীদের খোপায় ফুল ও মাথায় শোভা পায় ফুলের মুকুট। প্রিয়জনদের উপহার দেন ফুল।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তের উপ-পরিচালক সুশান্ত প্রামাণিক জানান, বেলনগরে বাণিজ্যিকভাবে জারবেরা ফুলের চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন আব্দুল আজিজ শেখ। তাকে দেখে আরও অনেক যুবক এগিয়ে আসছেন। ফুলের চাষ করে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও সচল রাখার চেষ্টা করছেন। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণকে সামনে রেখে ফুলের  ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।  ভবিষতে তাদের এই সাফল‌্য দেখে আরও বেকার যুবক এই কাজে উৎসাহ পাবেন।

মাগুরা/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়