ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সরকারি টাকা আত্মসাতের দায়ে সিএসআই কারাগারে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১২:০১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সরকারি টাকা আত্মসাতের দায়ে সিএসআই কারাগারে

কুষ্টিয়ায় আদালত অঙ্গনে দায়িত্ব পালনকালে সরকারি টাকা আত্মসাতের দায়ে কোর্ট উপপরিদর্শক (সিএসআই) মোস্তফা হাওলাদার নামে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একই মামলার অপর আসামি কোর্ট ইন্সপেক্টর কায়েম উদ্দিনকে বে-কসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন- ভোলা জেলার আলগী গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের ছেলে এবং ঘটনার সময় ২০১০ সালের ৮ মার্চ তারিখে কুষ্টিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানায় দায়িত্বরত সিনিয়র পুলিশ উপপরিদর্শক মো. মোস্তফা হাওলাদার। তিনি বর্তমানে দুই বছর যাবৎ চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে পুলিশের চাকুরি সূত্রে মোস্তফা হাওলাদার কুষ্টিয়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মালখানায় দায়িত্বরত সিনিয়র পুলিশ উপপরিদর্শক কর্মনিযুক্ত ছিলেন। এসময় দুটি মামলা নিষ্পত্তি অন্তে আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত জরিমানার টাকা যথাক্রমে ৪৩ হাজার এবং ২০ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেন। 

নিয়মানুযায়ী সরকারি কোষাগারের এই টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মোস্তফা হাওলাদারের ওপর।

তিনি টাকা জমা দিয়েছেন ঠিকই তবে ৪৩ হাজারের স্থলে তিন হাজার এবং ২০ হাজার ২০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করেন। সেই সাথে জমা দেওয়া ওই ট্রেজারি চালানের কপিতে ঘষামাজা করে তিন হাজারকে ৪৩ হাজার এবং ২০০ টাকাকে ২০ হাজার ২০০ টাকা দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করেন।

বিষয়টি পরবর্তীতে নিরীক্ষায় ধরা পড়লে আদালত তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন পুলিশ সুপারকে।

আদালতের আদেশে তৎকালীন কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা তদন্ত শেষে প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে ২১ এপ্রিল, ২০১০ তারিখে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু নানাভাবে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে সেই যাত্রায় মোস্তফা হাওলাদার পার পেয়ে যান।
বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় দুদকের ওপর তদন্তসহ মামলা দায়েরের আদেশ দিলে দুদক মামলাটির তদন্ত করেন।

দুদকের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সরকারি অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সাহার আলী বাদি হয়ে ১২ ডিসেম্বর, ২০১০ সালে কুষ্টিয়া সদর থানায় কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. কায়েম উদ্দিন এবং সিনিয়র কোর্ট উপপুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে দুদক ২০১১ সালের এপ্রিলে চার্জশিট দেয় আদালতে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন দুদকের কৌঁশুলি অ‌্যাডভোকেট আল মুজাহিদ ইসলাম মিঠু বলেন, ‘এই মামলার ঘটনাটি হয়ত বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছোট। কিন্তু এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- সরকারি দপ্তরগুলিতে দায়িত্ব পালনকালে এরা নানাভাবে অনিয়ম দুর্নীতি করে যাচ্ছে এবং যাবে। আবার আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে কীভাবে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে তারই একটা বিশ্লেষণধর্মী মামলার উদাহরণ এটি। দুদক এই মামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, অপরাধী যেই হোক, সনাক্ত হয়ে গেলে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় আদালত অঙ্গনে দায়িত্ব পালনকালে এই মামলার আসামি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তফা হাওলাদার পুলিশের করা তদন্তের সূত্রে ফাঁক ফোকর গলিয়ে বেরিয়ে গেলেও দুদকের দেওয়া চার্জশিটে দীর্ঘ স্বাক্ষ শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত দুইটি মামলার মধ্যে একটিতে এক বছর কারাদণ্ড এবং অপরটিতে দুই বছরসহ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। তবে অপর আসামি কোর্ট ইন্সপেক্টর কায়েম উদ্দিনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।’

কাঞ্চন কুমার/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়