যশোর পৌর নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের স্নায়ুচাপ
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম
যশোর পৌরসভা নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই পৌরবাসীর মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে। তবে নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে স্নায়ুচাপের মধ্যে রয়েছেন প্রার্থীরা।
বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছেন। তারা নিজ নিজ ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় রুটিন মেনে নিয়মিত নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিচ্ছেন।
তবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় নতুন নতুন তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী গত ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেছে।
তবে ঢাকার নির্বাচন কমিশন থেকে যশোর জেলা নির্বাচন অফিসে এখনও পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে দাবি যশোর নির্বাচন অফিসারের। এদিকে বিস্বস্ত সূত্র বলছে, হাইকোর্টের আদেশ জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছেছে। এই দুই অফিসের রিসিভ কপি সাংবাদিকদের হাতেও পৌঁছেছে।
হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশে ইতোমধ্যে নিয়মিত আপিল করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে স্থগিতাদেশের কপি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে এ মামলায় আপিল করা হবে। এছাড়া এই মামলায় পক্ষভুক্ত হয়েছেন যশোর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ। তিনিও আগামী রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আপিল করবেন।
অপর একটি সূত্র বলছে, যশোর পৌরসভা নির্বাচন স্থগিতের জন্য একটি পক্ষ বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে। তারা একাধিক মামলা করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যে দুইটি মামলা করা হয়েছে। যার একটির শুনানিতে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে।
তবে আইন পেশার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, যেহেতু একই ইস্যুতে এসব মামলা করা হচ্ছে, সেহেতু যে কোনো একটি মামলায় নির্বাচনের পক্ষে রায় দিলেই অন্যগুলো এমনিতেই খারিজ হয়ে যাবে।
এদিকে, যশোর পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। যেখানে কেউ নির্বাচন হচ্ছে বলে দাবি করছেন। আবার কেউ নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে বলে তুলে ধরছেন। তাই প্রচার-প্রচারণা স্থগিত রাখবেন নাকি চালিয়ে যাবেন তাই নিয়েই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা রীতিমতো স্নায়ুচাপে ভোগেন। তারা নির্বাচন অফিসের পাশাপাশি সাংবাদিকদের কাছেও ফোন করে সঠিক তথ্য জানতে চাইছেন।
যশোর জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও যশোর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি নির্বাচন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত যশোরবাসী জানতে পারবেন।’
গত ১৯ জানুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এই তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন স্থগিতের আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন যশোর উপশহরের ৭নং সেক্টেরের বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিনের ছেলে এডি আব্দুল্লাহ, রামনগর ইউনিয়নের আমির আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার মোকসেদ আলীর ছেলে মনিরুল ইসলাম।
যার শুনানি শেষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আদালত যশোর পৌরসভা নির্বাচনের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে আবেদনকারীদের দুজন সিরাজুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম এই মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। তারা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
যশোর পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী গত ১২ জানুয়ারি বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যারা রাতদিন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা যশোর শহরকে রীতিমতো উৎসবের শহরে রূপান্তর করেছেন। পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা পৌর এলাকা।
নৌকার প্রার্থী হায়দার গনি খান পলাশের পক্ষে চলছে মাইকিং। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে প্রতিদিনই হচ্ছে নৌকাকে বিজয়ী করতে প্রস্তুতিসভা। এই নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষে তাদের দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
এছাড়া মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ আলী সর্দার। সবমিলে এবার যশোর পৌরসভা নির্বাচনে ৬৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রিটন/সনি
আরো পড়ুন