ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বয়স্কভাতা কার্ড পেতে আর কত অপেক্ষা 

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:২৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
বয়স্কভাতা কার্ড পেতে আর কত অপেক্ষা 

৭৫ বছর বয়সেও সংসারের চাকা সচল রাখতে ‘ফেরিওয়ালা’ মোকবুল হোসেন

বয়সের ভারে ন‌্যুব্জ হয়ে পড়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের মোকবুল হোসেন।  দুই বেলা দুমুঠো খাবারের জন‌্য তাকে চুলের ক্লিপ, হাতের চুড়ি ফেরি করে ছুটে বেড়াতে হয় গ্রাম থেকে গ্রামে।  

তবে, ৭৫ বছর বয়সে এসে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগের মতো ছুটতে পারেন না। তাই দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন‌্য একটি বয়স্কভাতা কার্ডের পেতে দীর্ঘদিন ধরে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। আশ্বাস মিললেও জোটেনি কোনো কার্ড।

অন্যের জমিতে গড়ে তোলা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস মোকবুল হোসেনের। তার একার উপার্জনের ওপর চলেন স্ত্রী পারুল বেগম, ছেলে রাছেল আহমেদ, মেয়ে মরিয়ম ও নাতি। মেয়ের জামাই এক সন্তানের জন্ম দিয়েই ছেড়ে চলে যায়। মেয়ে ও নাতির দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়। ১৮ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে দিনমজুরের কাজ করে। ছেলের সীমিত আয়ে পরিবার চালানো কঠিন বলেও জানান মোকবুল হোসেন।   

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মোকবুল হোসেনের জন্ম ১৯৪৫ সালের ৬ মে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২, পুরুষের ৬৫ বছর। সে হিসাবে মোকবুল হোসেন আরও ১০ বছর আগে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।

মোকবুল হোসেন ২৫ বছর ধরে ফেরিওয়ালা। একটি ভ্যান গাড়িতে কিছু পণ্য নিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামের রাস্তায় রাস্তায়। তার কাছে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের কপালের টিপ, চুলের ক্লিপ, চুড়িসহ রকমারি পণ্য। পাওয়া যায় বাদাম-বুটও। 
 
মোকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি মুক্তি ফোর্সে ছিলাম। স্বাধীনতার ৫ থেকে ৭ বছর পর একটা গুজব রটলো, সব মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নাকি মেরে ফেলবে। তখন মা আমার সব কাগজপত্র, ছবিসহ পুড়িয়ে ফেলেন। এর আগে আমি শেখ মুজিবের নির্বাচন করেছি। তবে এখন এগুলা বলে কোনো লাভ নেই। আমার কাছে কাগজ নেই। তাই এগুলো কেউ বিশ্বাস করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বা সহযোগিতা না পাওয়ায় কোনো আফসোস নেই। বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্যেও কোনো আফসোস থাকতো না।  কিন্তু এখন শরীর অচল প্রায়। তাই কিছু সহযোগিতার আশায় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অনেকবার গিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

জামালপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভুলন বালা বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু হওয়ায়, আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি। মোকবুল হোসেনের বিষয়টি আমার জানা নেই। হয়তো তিনি তৎকালীন চেয়ারম্যানের কাছে এসেছিলেন। তাদের মাঝে কী কথা হয়েছে, তাও জানা নেই। আমি অবশ্যই তার বিষয়ে খোঁজ নেবো।’

ঠাকুরগাঁও সদর থানার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জামালপুর ইউনিয়নের মকবুল বয়স্ক ভাতার কার্ড না পাওয়ার বিষয়ে জানা ছিল না। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁও/এনই 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়