ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চাঁদপুরে অর্ধশত অবৈধ ইটভাটায় দেদারছে পুড়ছে কাঠ-টায়ার

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৪৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
চাঁদপুরে অর্ধশত অবৈধ ইটভাটায় দেদারছে পুড়ছে কাঠ-টায়ার

চাঁদপুরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও টায়ার। ৫০টির মতো অবৈধ ইটভাটায় দেদারছে চলছে এই যজ্ঞ। তবে এসব ইটভাটার মালিক পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসছে না।

সরজমিনে দেখা গেছে, এসব ইটভাটায় ব‌্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। আর ইট পোড়াতে কয়লার পরিবর্তে নির্বিচারে জ্বলছে কাঠ ও যানবাহনের পুরনো টায়ার। বেশিরভাগ ইট ভাটাগুলোতেই নির্দিষ্ট উচ্চতার (১২০ ফুট উঁচু) পাকা চিমনি নেই। কম উচ্চতার এসব চিমনি দিয়ে কাঠ ও টায়ার পোড়া ধোঁয়া মিশে যাচ্ছে বাতাসে। 

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের নমুনা সংগ্রহকারী মো. মোবারক হোসেন জানান, চাঁদপুর জেলায় ১২৪টি ইটভাটা। এরমধ্যে ৭৪টি বৈধ, অবৈধ ৫০টি। চাঁদপুর সদরে ২২টি ইটভাটার মধ্যে ১৪টিই অবৈধ এবং ফরিদগঞ্জে ২৯টির মধ্যে ১৭টি অবৈধ। মতলব দক্ষিণের চারটি ইটভাটার মধ্যে চারটিই অবৈধ।

এছাড়াও হাইমচরে একটি, হাজীগঞ্জে সাতটি, মতলব উত্তরে একটি, কচুয়ায় একটি এবং শাহরাস্তিতে পাঁচটি অবৈধ ইটভাটা ইট উৎপাদন করছে পুরোদমে। 

তিনি আরও জানান, জেলায় জিগজ্যাগ ইটভাটা ৯৪টি, ফিক্সড চিমনী রয়েছে মাত্র ৩০টি ইটভাটার। তবে ইটভাটাগুলোর চিমনীর উচ্চতা ঠিক আছে।

সূত্র মতে, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাটা স্থাপনের লাইসেন্স দেয়। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে এক কিলোমিটার জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার কথা। 

চাঁদপুরের বেশিরভাগ ইটভাটা মালিকই এসব শর্ত মানছেন না। যেসব ইটভাটা চালু রয়েছে তার অধিকাংশ মালিকই জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ না করেই বছরের পর বছর ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুর’-এর সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহাসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া মাটি কাটার ক্ষেত্রে তাদের বিন্দু মাত্র নিয়ম মানতে দেখা যাচ্ছে না। এতে ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। ইটভাটার আশপাশের গাছপালাগুলোর অবস্থা শোচনীয়। এসব থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের উচিত অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়া।’

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, জমির ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাটিতে বেশি পুষ্টি থাকে। যা ফসল উৎপাদনে খুবই সহায়ক। কৃষকদের অস্বচ্ছলতার সুযোগে ভাটা মালিকরা জমির মালিকদের উদ্বুদ্ধ করে ইট তৈরির জন্য কৃষি জমির টপ সয়েল কিনছেন। ভাটায় প্রতিবছর টপ সয়েল ব্যবহার করায় জমির পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। আর কৃষকরা জমিতে সারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এভাবে টপ সয়েল তুলে নেওয়া অব্যাহত থাকলে ভতিষ্যতে জমিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ভাটা মালিকরা আমাদের নিষেধ কোনভাবেই মানছেন না। তারা কৃষি জমির টপ সয়েল ধ্বংস করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করছেন।’

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কৃষি জমি ছাড়া মাটি কোথা থেকে আনব? আর ইটের বদলে ব্লক তৈরি করলে সে ব্লক বিক্রির জন্যও সরকারের সুনির্দষ্ট ব্যবস্থা প্রয়োজন। যেমন- সরকারি রাস্তাঘাটের সব টেন্ডারে ব্লক ক্রয়ের নির্দেশনা রাখতে হবে। এছাড়া এসব ব‌্যাপারে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। কেননা ব্লক তৈরিতে পাথরের ব্যবহার আমাদের জানা নেই।’

জেলা ইট প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি শেখ আবদুর রশীদ জানান, কনক্রিট ইটের বাজার এদেশে এখনো সুগম হয়নি। তাই মাটির ইট বানাতে হচ্ছে। তবে যারা অবৈধভাবে ব্রিকফিল্ড চালাচ্ছে প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে বৈধ ইটভাটা মালিকরা কিছুটা শান্তি পাবে।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজিম হোসেন শেখ বলেন, ‘আমরা সবাইকে জিগজ্যাগ ইটভাটা চালানোর পরামর্শ দিচ্ছি। যারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ইনফোর্স মামলা অব্যাহত আছে।’

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস জানান, অবৈধ ইটভাটা পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুর/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়