সফল নারী উদ্যোক্তা রামপালের পুর্ণিমা মন্ডল
আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম
ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিকাশ ও নগদের আর্থিক লেনদেনে ভাগ্য বদলেছেন বাগেরহাটের রামপালের পুর্ণিমা মন্ডল।
রামপালের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংকিং সেবা না থাকায় নগদ ও বিকাশে লেনদেনই ওই এলাকার মানুষের ভরসা। নিরাপদ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিকাশ ও নগদকে বেছে নিয়েছেন এলাকাবাসী। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েই জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন পুর্ণিমা। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের রিচার্জও করছেন তিনি।
পুর্ণিমা মন্ডলের স্বামী মিলন কৃত্তনিয়া দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হতে পারেননি। বরং সাড়ে তিন লাখ টাকা দেনা হন মিলন। এরপরেই অদম্য সাহস ও মনোবল নিয়ে পুর্ণিমা নিজেই হাল ধরেন স্বামীর ব্যবসার। সংসারের যাবতীয় কাজ ঠিক রেখে দোকানের ব্যবসা চালিয়ে গেছেন তিনি।
খুলনা-মোংলা মহাসড়কের রামপাল উপজেলার বাবুর বাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সোভা টেলিকম নামের দোকানে মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা শুরু করেন। শুরুর দিকে নারী হিসেবে মোবাইল রিচার্জের ব্যবসায় কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাকে। সব বাধা পেরিয়ে দিন দিন দোকানে লেনদেনের পরিমান বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আশপাশের মাছ ব্যবসায়ী, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকরা নগদের মাধ্যমে কম খরচে তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ লেনদেন শুরু করেন পুর্ণিমার কাছ থেকে। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিদিন এক থেকে দেড়/দুই লাখ টাকা লেনদেন করেন তিনি।
বর্তমানে পুর্ণিমা স্বামীর দেনা পরিশোধ করে, ছেলের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সংসারের সকল খরচই চালাচ্ছেন এই ব্যবসা থেকে।
পুর্ণিমা মন্ডল নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম যে লোকেরা আমার সম্পর্কে কী ভাববে, কিন্তু নগদ সহায়তায় আমার ব্যবসা যখন বাড়তে শুরু করে, আমি তাতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। মাঝে মাঝে আমি নিজের কাজটি নিয়ে গর্ববোধও করি। আমি নগদ ও বিকাশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যা আমাকে সম্মান অর্জন করতে এবং আমার প্রতিবেশ বদলাতে সহায়তা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি কোনো নারী চিন্তা করেন আমি বসে থাকবো না, আমি নিজে কিছু করবো, আমি আমার নিজেকে বদলাবো, অন্যের উপর নির্ভর হবো না এবং সে যদি মনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোনো কিছু করার চেষ্টা করে- সে এক সময় সফল হতে পারবে। আমার জীবনের যুদ্ধটাও এরকম। আমি একসময় চিন্তা করেছিলাম আমি নিজে কিছু করবো। যেহেতু আমি শিক্ষিত মেয়ে কিন্তু কোনোরকম চাকরিতে আমি যুক্ত ছিলাম না। প্রথমদিকে সাধারণ ব্যবসা মনে হলেও এখন বুঝি এই ব্যবসাতে এসেই আমি ঠিক করেছি।’
রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার বলেন, ‘পুর্ণিমা মন্ডল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এখানে রিচার্জ ব্যবসা শুরু করেন। তার লেনদেনও ভালো। এ কারণে দিন দিন অসংখ্য লোকজন এখান থেকে লেনদেন করে। আমরা চাই পুর্ণিমার মত আরো অনেক নারীরা নিজেদের উদ্যোগে যে কোনো কাজে এগিয়ে আসুক। আমি পুর্ণিমার সার্বিক কল্যাণ কামনা করি।’
বাগেরহাট সদর উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি রিজিয়া পারভীন বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে নারী। নারীরা এখন হাটে, মাঠে, ঘাটে, বাসে, ট্রেনে সব ক্ষেত্রে সর্বত্র তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। নারীরা এখন উদ্যোক্তা হিসেবেও সফল।’
বাগেরহাট/টিপু
আরো পড়ুন