ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বরই চাষে ভাগ্য বদলেছে দুলাল হোসেনের 

জাহিদুল হক চন্দন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১১ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১১:৫৭, ১১ মার্চ ২০২১
বরই চাষে ভাগ্য বদলেছে দুলাল হোসেনের 

১৯৯১ সালে এস.এস.সি ও ১৯৯৩ সালে এইচ,এস,সি পাশ করেন দুলাল হোসেন। বাবার অল্প আয়ে পাঁচ ভাই আর এক বোনের সংসারে লেখাপড়া আর তেমন করা হয়ে উঠেনি।

তারপর প্রায় ৮ বছর ধরে বোরে ধানের আবাদ করে চেষ্টা করেছেন সংসারের দারিদ্রতা দূর করতে। তবে বোরে আবাদে লোকসান হওয়ায় শুরু করেন বরই চাষ।

দারিদ্রের কষাঘাতে দীর্ঘদিন লড়াই করে অবশেষে বরই চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ১০ জন লোকের কর্মসংস্থানও করেছেন তিনি। এ বরই চাষে দারিদ্রতা পুরোপুরি দূর না হলেও ভাগ্য খুলেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের উকিয়ারা গ্রামের দুলাল হোসেনের।

১৯ বছর আগে সখ করে বাড়ির আঙ্গিনায় দুটি বরই গাছের চারা রোপণ করেন কৃষক দুলাল হোসেন। গাছ দুটিতে প্রচুর পরিমাণে ফলন পাওয়ায় তার আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর ক্ষুদ্র পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে  বরই চাষাবাদের চিন্তা শুরু করেন তিনি।

প্রথম‍দিকে মুনাফা কিছু কম হলেও বরই চাষাবাদে এখন বেশ লাভবান তিনি। ২ বিঘা জমি নিয়ে বরই চাষ শুরু করলেও চলতি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে বরই চাষাবাদ করেছেন তিনি। অল্প খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় প্রতি বছরই বরই চাষাবাদের জমি বৃদ্ধি করছেন দুলাল হোসেন। কৃষি জমি ভাড়া নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মধ্য উকিয়ারা এলাকায় গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি বরই বাগান।

বল সুন্দরী, আপেলকুল, কাশ্মেরী আপেলকুল, নারিকেল কুল, সিডলেস কুলসহ বিভিন্ন জাতের বরই রয়েছে দুলাল হোসেনের বাগানে। দুলাল হোসেনের সাফল্য দেখে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে বরই চাষির সংখ্যা।

বরই চাষি দুলাল হোসেন বলেন, ‘দারিদ্রতার কারণে এইচ.এস.সি পাশ করার পর কৃষি কাজ শুরু করি। প্রথমে বোরে ধানের আবাদ করে তেমন লাভবান হতে পারেনি। পরে বরই চাষ করে বেশ লাভবান হই। নিজের তেমন জমি না থাকায় জমি লিজ নিয়ে বরই চাষ করছি। যে স্বপ্ন নিয়ে বরই বাগান শুরু করছিলাম তা এখন বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে।’

দুলাল হোসেন আরও বলেন, ‘প্রতি বিঘা (৩০ শতাংশ) জমির জন্য বছরে জমির মালিককে দিতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য সব খরচ মিলিয়ে বছরে প্রতি বিঘা জমিতে ব্যয় হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ১০০টি গাছের চারা রোপণ করা যায়। প্রথম বছর প্রতিটি গাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ কেজি ফল পাওয়া যায়। বড়ই গাছের বয়স ৪/৫ বছর হলেই প্রতিটি গাছ থেকে দুই থেকে আড়ই মণ ফল পাওয়া যায় অনায়াসে। উন্নত জাতের বড়ইগুলোর স্থানীয় পাইকারি বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে।’

চলতি মৌসুমে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ বড়ই বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫’শ টাকায়। ভালো এবং সতেজ বরই হওয়ায় স্থানীয় পাইকারি বাজারে চাহিদাও বেশ। বাগান থেকেই মানিকগঞ্জ ও আশেপাশের ফল ব্যবসায়ীরা এসব বড়ই ক্রয় করেন বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের দুপুলিয়া গ্রামের কৃষি শ্রমিক গোলাম নবী বলেন, ‘আগে কৃষি কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হতো। কখনও কাজ পেতোম কখনও পেতাম না। ৫ বছর আগে থেকে এ বরই বাগানে ১২ হাজার টাকায় মাসিক বেতনে কাজ করছি। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে এখন ভালো আছি।’

জিলিমন বেগম নামে স্থানীয় এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘এলাকাতে তেমন কাজ কাম নেই। বরই বাগানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে।’

দুলাল হোসেনের ছেলে মো. মেহীনাল হোসেন বলেন, ‘বাড়ির পাশেই তাদের সবগুলো বড়ই বাগান। পড়াশুনার পাশাপাশি সে ও তার ছোট ভাই নিয়মিত বড়ই বাগানে কাজ করেন। বড়ই চাষাবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে মুনাফাও কয়েকগুণ বেশি। অল্প সুদে কোনো লোন পেলে বড়ই আবাদের জমির পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে আমাদেদের।’ তবে বড়ই চাষাবাদের জমিগুলো নিজেদের না থাকায় চেষ্টা করেও কোনো লোন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, কৃষি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে অল্প সুদে লোন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ব্যক্তিদের লোনের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা তহবিল থেকে খুব সহজেই চাহিদা অনুযায়ী লোন দেওয়া যায়। এ বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করলে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

মানিকগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহজাহান আলী বিশ্বাস জানান, গত বছর মানিকগঞ্জে ৭৭ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বড়ই চাষাবাদ হয়েছিল। কৃষি বিভাগ বরই চাষিদের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করছে। এতে করে চলতি মৌসুমে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। অল্প খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় বড়ই চাষাবাদে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে।

মানিকগঞ্জ /বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়