ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন মাহমুদ উস-সামাদ

আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৫, ১২ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১০:২৭, ১২ মার্চ ২০২১
অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন মাহমুদ উস-সামাদ

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে লকডাউনের মধ্যেও নিজের নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী।

সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বিপর্যস্ত মানুষের জন্য। তার ত্রাণ সহায়তা পান চা শ্রমিক, বেদে, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে কর্মহীন হয়েপড়া নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষেরাও। মোবাইল ফোনে কল পেলে রাতের আঁধারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।

শুধু তাই নয়; করোনার কারণে দেশে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে সিলেটের শাহজালাল (রহ.) মাজারে অভুক্ত থাকা জালালী কবুতর এবং পুকুরের গজার মাছের জন্য খাবার নিয়েও ছুটে যান তিনি। নিজ হাতে তিনি গজার মাছের জন্য ছোট মাছ এবং কবুতরের জন্য ধান ছিটিয়ে দেন। দুর্যোগকালীন তার এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়ায়।

মহামারি ছড়িয়ে পড়ার এক বছরের মাথায় করোনার কাছে হার মানলেন টানা তিনবার নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি। তার মৃত্যুতে নির্বাচনি এলাকা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় শোক নেমে এসেছে। শোক প্রকাশ করেছেন সিলেটের রাজনৈতিক মহল থেকেও।

ফেঞ্চুগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদ উদ্দিন বলেন, গত বছরের মার্চ মাসে যখন করোনা মহামারির কারণে লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তখন সংসদ সদস্য মাহমুদ উস-সামাদ নিজ এলাকায় অবস্থান করে মানুষের পাশে দাঁড়ান। তিনি খাদ্যসামগ্রী সহায়তার পাশাপাশি প্রতিদিনই জনসচেতনতার জন্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে নির্বাচনি এলাকার জনসাধারণ শোকাহত। মৃত্যুর খবর পেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নুরপুরের তার বাড়িতে সর্বস্তরের জনসাধারণ ভিড় করেন।

মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরীর নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনের মধ্যে এমপি ফেঞ্চুগঞ্জে নিজ বাড়ির সামনে মাছসহ সবজি সাজিয়ে রাখতেন। সেখান থেকে অভাব-অনাটনে থাকা মানুষের মধ্যে বিতরণ করতেন। তাকে প্রবাসী পরিবারের কেউ ফোন দিয়ে খাদ্যসামগ্রী চাইলে তিনি গোপনে তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি কৃষকের ধান কেটে দেওয়া, রমজানে অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়াসহ মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহমুদ উস-সামাদ। গত রোববার (০৭ মার্চ) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন তার দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

মাহমুদ উস-সামাদ ধর্ম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর পেছনে থাকাতে হয়নি তাকে। ২০১৪ সালে দশম এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৫ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি স্ত্রী এবং এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।

জানাজা ও দাফন শুক্রবার
মাহমুদ উস সামাদের মরদেহ শুক্রবার (১২ মার্চ) সকাল ১১টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার করে ফেঞ্চুগঞ্জের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। বিকেল ৫টায় স্থানীয় কাশিম আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়