সৈকতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পর্যটকদের উদাসীনতা
সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ভিড় করেছেন লাখো পর্যটক। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মাঝেও মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন পর্যটকরা। তবে মাইকিংয়ের মাধ্যমে পর্যটকদের সচেতন করতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। কিন্তু মাইকিং কানেই তুলছে না অনেকেই।
শুক্রবার (১৯ মার্চ) সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই অন্য দিনের চেয়েও সৈকত শহর কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বেশি। উৎসব মুখর সাগরতীর। তবে পর্যটকরা কেউ মানছেন না করোনার স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক পরা নিয়ে পর্যটকদের রয়েছে চরম অনীহা। দিচ্ছেন নানা অজুহাত।
চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক অনিক বলেন, ‘মাস্ক নিয়ে আসছিলাম। এখন পানিতে নামব তাই ফেলে দিয়েছি। পানিতে নামলে তো মাস্কটা ভিজে যাবে। পরে মাস্ক কিনে পরব।’
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক ওয়াজেদ ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক পরা বিষয়টা অনীহা নয়। বিষয়টা হচ্ছে, বাসা থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। এটার জন্য কক্সবাজার ছুটে আসা। এখন স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক ব্যবহার কেউ মানছে না।’
পর্যটক শামসুল আলম বলেন, ‘মাস্ক সামনে আছে, সামনে গিয়েই পরব। বন্ধুরা সবাই মিলে সৈকতে আসছি, কেউ সামনে চলে গেছে, তাদের হাতে মাস্ক রয়েছে। একটু সামনে গিয়ে তাদের খুঁজে মাস্ক নিয়ে ব্যবহার করব।’
আরেক পর্যটক হিমেল বলেন, ‘এখন তো সৈকতে উৎসব চলছে। এই উৎসবে আমাদের তো সচেতনতা অনেক কম, আগের মতো নেই বললেই চলে। তারপরও চেষ্টা করব মাস্ক ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকতে। কারণ, আমরা সুরক্ষিত থাকলে দেশও সুরক্ষিত থাকবে।’
এদিকে শুক্রবার সরজমিনে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায়, কয়েক হাজার পর্যটক এসব পয়েন্টে ভিড় করেছেন। আগত পর্যটকরা সৈকত, পানি, বালিয়াড়ি ও কিটকটে (ছাতায়) বসে আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে রয়েছেন। আর তাদের আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড়ে হার মেনেছে করোনার স্বাস্থ্যবিধি। কেউ মানছেন না সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক ব্যবহারের বিধিনিষেধ। যারা মাস্ক ব্যবহার করে সৈকতে নেমেছেন তারাও কিছুক্ষণ পর সৈকতের বালিয়াড়িতে ফেলে দিচ্ছেন ব্যবহৃত মাস্কটি। বালিয়াড়িতে শয়ে শয়ে ব্যবহৃত মাস্ক পড়ে তাকতে দেখা যায়।
সি-সেইভ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লাইফ গার্ডের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করি। কিন্তু যেসব পর্যটক সৈকতে মাস্ক পরে আসেন তারা ওই মাস্ক ব্যবহার করে সৈকতেই ফেলে যান। যে কারণে সৈকতের বালিয়াড়ি নোংরা হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করি, বালিয়াড়ি থেকে ব্যবহৃত মাস্কটি তুলে ডাস্টবিনে ফেলার। এক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।’
এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক এরশাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনই সৈকতে দায়িত্ব পালন করছি। আগে পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতাম। এখন পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে পর্যটকদের সচেতন করতে মাইকিং, টহলরত মাইকিং, বিচ বাইকযোগে মাইকিং ও পর্যটকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করছি। এছাড়া পর্যটক সঙ্গে কথা বলে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’
এরশাদ হোসেন আরও বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেক পর্যটক সৈকতে আসেন। তারা সবাই নতুন। সবাইকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করছি। অনেকে বলেন সৈকতে প্রবেশের নিয়ম-কানুন তারা জানেন না। আশা করি, পর্যটকরা সচেতন হয়ে উঠবে।’
এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে করোনার সংক্রমণ রোধে সৈকতে অভিযানে নামে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের চার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মুহূর্তেই পাল্টে যায় সৈকতের চিত্র। ধুম পড়ে সৈকতে আগত পর্যটকদের মাস্ক কেনার। চারটি পয়েন্টেই যারা সকাল থেকে মাস্ক ব্যবহার করেননি, তারা মাস্ক কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সৈকতে পর্যটকের ঢল নামে। তাই করোনার সংক্রমণ রোধে পর্যটকদের সচেতন করতেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এটি ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে। এখন পর্যন্ত ৫০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে জরিমানা মুখ্য বিষয় নয়; মূলত পর্যটকদের সচেতন করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
কক্সবাজার/সনি
আরো পড়ুন