ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের লাশ হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ২৭ মার্চ ২০২১  
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের লাশ হস্তান্তর

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে সেখানে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত ১৭ জনের মধ্যে আগুনে পুড়ে যাওয়ায় আটজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন পড়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ময়নাতদন্তের সময় মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নিহতদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর জন্য।

নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তারা হলেন- ডারিকাপাড়া গ্রামের মোখলেসুর রহমান (৪৫), তার স্ত্রী পারভীন বেগম (৪০), রাঙ্গামাটি গ্রামের মো. সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (২৫), তাদের ছেলে সাজিদ (৮), মেয়ে সাফা (২), শামসুন্নাহারের বড় বোন বড় মজিদপুর গ্রামের বাসিন্দা কামরুন্নাহার (৩৭), উপজেলা সদরের মো. ভুট্টু (৪০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৪০), ছেলে ইয়ামিন (১৫), বড় মজিদপুরের ফুলমিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫), মেয়ে সুমাইয়া (৮) ও সাবিহা (৩); দুরামিঠিপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম (৪৬) এবং মাইক্রোবাসের চালক মো. হানিফ (৩০)। হানিফের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার পঁচাকান্দ গ্রামে। দুর্ঘটনায় শুধু নিহত মোখলেসুর রহমান ও পারভীন বেগমের ছেলে পাভেল (২৭) বেঁচে আছেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রাজশাহীর কাটাখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মতিয়ার রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে মাইক্রোবাসের ভেতর ১১টি মরদেহ পুড়ে গেছে। এই ১১ জনের মধ্যে দুইজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। আর দুর্ঘটনার পর ছয়জন ছিঁটকে বাইরে চলে আসেন। কালো বর্ণ ধারণ করায় ৯ জনের চেনার মতো অবস্থা নেই। তাই ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হয়েছে। তবে দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনেরই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য।

পুলিশ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, মরদেহ দেওয়ার সময় প্যাকেটে নম্বর লিখে দেওয়া হয়েছে। সেভাবে স্বজনেরা নিয়ে গিয়ে দাফন করবেন। কবরের সঙ্গে প্যাকেটের নম্বরটা লিখে রাখা হবে। এরপর ডিএনএ পরীক্ষার যখন ফলাফল পাওয়া যাবে, তখন বোঝা যাবে কোনটা কার কবর। নয়জনের কার কোনটি কবর জানতে হলে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

দুর্ঘটনার কারণ জানতে জেলা প্রশাসন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবু আসলাম। তিনি জানান, তারা কাজ শুরু করেছেন। দ্রুত তদন্ত শেষ করবেন। 

মরদেহগুলো বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মরদেহের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আবু আসলাম। 

শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে কাটাখালী থানার সামনে একটি বাস মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়। মাইক্রোবাসে ১৮ জন ছিলেন। বেঁচে গেছেন শুধু একজন। পীরগঞ্জ থেকে এই ১৮ জন মাইক্রোবাসে চড়ে পিকনিক করতে রাজশাহীর একটি পার্কে আসছিলেন।

কাটাখালী থানার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে আসছে। সিসি ক্যামেরা পার হওয়ার পর হানিফ পরিবহনের বাসটি মাইক্রোবাসকে ঠেলে আনছে। এই সময়ই মাইক্রোবাসের সামনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি লেগুনায় আগুন লেগে যায়।

শনিবার (২৭ মার্চ) হানিফ পরিবহনের ওই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম আবদুর রহিম (৩৫)। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম ফজলুল হক। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শনিবার (২৭ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে আরএমপির বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্র বাইপাস এলাকা থেকে বাসচালক রহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরএমপির কাটাখালী থানা এ অভিযান চালায়।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাতে চালককে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করে পুলিশ। কাটাখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলা করেন। তখনও পর্যন্ত চালকের নাম না জানার কারণে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে মামলাটি করা হয়। তবে চালককে শনাক্তের পরই তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।


 

তানজিমুল/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়