ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ঘুচলো না ঈশ্বরদীবাসীর কলঙ্ক

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১১:৫৩, ১ এপ্রিল ২০২১
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ঘুচলো না ঈশ্বরদীবাসীর কলঙ্ক

১৯৪৮ সাল থেকে একটি কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলাবাসী। পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে ঈশ্বরদীতে রয়েছে একটি স্কুল। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সে কলঙ্ক ঘোচেনি।

বলা হচ্ছে ঈশ্বরদীর বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা। স্কুলটির নাম পরিবর্তনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও পরবর্তীতে নাম সেই তদন্ত কমিটির একটি প্রস্তুাবিত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও তা কার্যকর হয়নি।

‘ঈশ্বরদীর ইতিহাস’ বইয়ের প্রণেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল আহমেদ জানান, ১৯৫২ সালে ঈশ্বরদীর আটকেপড়া পাকিস্তানি অবাঙালিরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঈশ্বরদীর লোকো রোডে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বিরাটাকার রেলওয়ে রানিংরুমে তৎকালীন পাকিস্তানি উর্দূভাষী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে নামকরণ করে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এটি ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে প্রতিষ্ঠা পায় স্কুলটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানেও তিনি ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ বলে এই ঘোষণা করেছিলেন। অথচ ঈশ্বরদীর এই স্কুলের নামকরণের মধ্য দিয়ে সেই নাজিম উদ্দীনের নাম গত ৬৯ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ঈশ্বরদীবাসী।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরদীর জিন্নাহ কলেজের নাম পরিবর্তন করে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ করা হয়। এছাড়াও ঈশ্বরদীর একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন হয়েছে অথচ বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচারণ করা সেই খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরদীর ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়’টির নাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে।

ঈশ্বরদীবাসীও এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হন। সবার দাবির প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান (বর্তমানে সংসদ সদস্য) বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস এই তদন্ত কমিটির সদস্য। এদিকে, গত এক বছরেও সে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার দাবিতে গত ৮ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নিজেরাই স্কুলের প্রধান ফটক থেকে ‘নাজিম উদ্দীন’ নামটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেয়। ছাত্রলীগের এই উদ্যোগ প্রসংশিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদীর নাজিম উদ্দীন স্কুলের প্রধান শিক্ষক খন্দকার আব্দুর রহমান জানান, প্রায় এক বছর আগে গঠিত তদন্ত কমিটির নিকট এই বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার জন্য সুপারিশমালা পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের এখনো কিছুই জানানো হয়নি।

পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন,  ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার জন্য আমি এই এলাকার এমপি হিসেবে রেলওয়ে মন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছি।’

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)পিএম ইমরুল কায়েস জানান, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী সেই খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর মধ্যে সুপারিশপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান রেখে সরকারি রেলওয়ের এই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এর মধ্যে নেওয়া হয়েছে। আমরা সুপারিশমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাবনা/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়