জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ: থুথু খাইয়ে-কান ধরে উঠবস করে বিচার!
গাজীপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
জিনের ভয় দেখিয়ে টানা ১৫ দিন ধরে একটি ছেলে শিশুকে (৯) ধর্ষণ করে আসছিল শাহাদাত হোসেন (২৪) নামে এক সহকারী মুয়াজ্জিন।
শিশুটি নিজ পরিবারের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করে। পরিবারের লোকজন বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের জানায়। পরে তারা নির্যাতনের শিকার শিশুর বাবাকে থানায় যেতে নিষেধ করে বিষয়টি শালিসে মীমাংসা করার কথা বলেন।
এদিকে গ্রাম্য শালিসে অপরাধী প্রমাণিত হয় শাহাদাত। বিচারে মাটিতে থুথু ফেলে তা চাটানো হয়। এছাড়া ২০ বার কান ধরে উঠবস করার পর গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার রায় দেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।
সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান নির্যাতনের শিকার ওই শিশুর বাবা। এর আগে রোববার (৪ এপ্রিল) গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড তুমলিয়া গ্রামে এ শালিসি বিচার হয়।
অভিযুক্ত শাহাদাত উপজেলার তুমলিয়া গ্রামের মেজবাহ উদ্দিনের ছেলে। সে পাশের গ্রাম দুবার্টি আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও তুমলিয়া জামে মসজিদের সহকারী মুয়াজ্জিন। নির্যাতনের শিকার ওই শিশুটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেকে আরবি পড়ানোর ব্যাপারে শাহাদাতকে বলি। সে বাড়িতে এসে পড়াতে পারবে না বলে জানায়। সন্ধ্যার পর তার বাড়িতে পড়তে যেতে বলে। তার কথামতো সন্ধ্যার পর ছেলেকে তার বাড়িতে পাঠানো হতো। আরও ১০/১৫ জন আরবি পড়তো শাহাদাতের কাছে। এক সপ্তাহ আগে শাহাদাতের কাছে আরবি পড়তে যেতে অনিহা প্রকাশ করে ছেলে। সেদিন পড়তে যেতে দেরি হওয়ায় বাড়ি এসে খোঁজ নেয় শাহাদাত। পরে তার সাথে পাঠানোর চেষ্টা করলে ছেলে কান্নাকাটি করে। এসময় পরিবারের কাছে মূল ঘটনা খুলে বলে সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা বাজলে অন্য ছেলেদের ছুটি দিয়ে দিতো লম্পট শাহাদাত। পরে পড়ার ঘরে আটকে রেখে জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতো। এ ঘটনা কাউকে বললে তার সঙ্গে থাকা জিন শিশুটির ক্ষতি করবে বলে ভয় দেখাতো শাহাদাত।’
বিচারের বিষয়ে শিশুটির বাবা জানান, বিষয়টি কালীগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহিম মোল্লা ওরফে চান্দু মোল্লা এবং ওই ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর আফছার আহমেদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়। তারা ১০/১৫ দিন আগে শালিস বসিয়ে শাহাদাতকে মারধর করে।
বিচারে সন্তুষ্ট না হওয়ায় গাজীপুরের এসপি সাহেবের কাছে যাওয়ার কথা বলেন শিশুটির বাবা। পরে রোববার (৪ এপ্রিল) দুপুরে আবার শালিস বসানো হয়। এতে শাহাদাকে বিচারকরা মাটিতে থুথু ফেলে তা চেটে তুলতে বলেন। এছাড়া ২০ বার কান ধরে উঠবস করান। পরে তাকে গ্রাম ছাড়া হতে বলেন।
কাউন্সিলরদের কথায় এবং নিজের সম্মানহানীর কথা চিন্তা করে থানা পুলিশে যাননি বলেও জানান নির্যাতনের শিকার ওই শিশুর বাবা।
কালীগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহিম মোল্লা ওরফে চান্দু মোল্লা বলেন, ‘এর আগেও শাহাদাত জিনের ভয় দেখিয়ে পানি পড়া দিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আবার এ ঘটনা ঘটালো। টাকা-পয়সা খরচ হবে বলে তাদেরকে থানা-পুলিশ যেতে নিরুৎসাহীত করেছি। তাছাড়া আমার বয়স হয়েছে, তাই নতুন কাউন্সিলর দায়িত্ব নিয়েছে বিচার করার। তাই আমি আর কিছু বলিনি। তবে এটার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।’
নব নির্বাচিত কাউন্সিলর আফছার আহমেদ বলেন, ‘আসলে বিষয়টি বড় করে দেখলে অনেক কিছু। আমরা গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে তার বিচার করে দিয়েছি। একবার বিচার করার পর নির্যাতনের শিকার পরিবার সন্তুষ্ট না হওয়ায় আরও একবার বিচার করেছি। তাছাড়া নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা থানা-পুলিশ না করে আমাকে বিচার করে দিতে বলেছিলেন। তাছাড়া শালিসের সময় শুধু আমি না, কাউন্সিলর চান্দু মোল্লা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতৃবৃন্দও ছিলেন।’
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মিজানুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রফিক সরকার/সনি
আরো পড়ুন