ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সালথায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ: গ্রেফতার আতঙ্কে ৩০ গ্রাম পুরুষ শূন্য

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:০০, ১০ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১২:৩৬, ১০ এপ্রিল ২০২১
সালথায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ: গ্রেফতার আতঙ্কে ৩০ গ্রাম পুরুষ শূন্য

ফরিদপুরের সালথায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে ৩০টি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। রাতের বেলা অনেকেই বিভিন্নস্থানে লুকিয়ে থাকছে। সহিংসতার পর সালথা উপজেলা পরিষদ ও আশপাশের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সালথা, সোনাপুর, রামকান্তপুর, গট্রি, ভাওয়াল, মাঝারদিয়াসহ অন্তত ৩০টি গ্রাম পুরুষশূন্য রয়েছে। এসব গ্রামে কোন পুরুষ মানুষের দেখা মিলছে না। মহিলারা বাড়িতে থাকলেও তারা ভয়ে মুখ খুলছে না। তাদের চোখে মুখে রয়েছে আতঙ্কের ছাপ।

বিভিন্ন হাট-বাজারগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। দিনের বেলা কিছু লোকজন এলাকায় দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে গ্রামে কারো দেখা মেলে না। এলাকা পুরুষশূন্য থাকায় মাঠের ফসল নষ্ট হবার পথে। এসব এলাকাজুড়ে পুলিশ, ডিবি, বিজিবির টহল রয়েছে। অচেনা কাউকে দেখলেই ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় ফুকরা বাজার এলাকার করিমন বেগম (৫৫) জানান, সব সময় আমরা ভয়ে রয়েছি। পুলিশ দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যাচ্ছে। বাড়িতে কোন পুরুষ সদস্য নেই। সবাই পালিয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।

নূর জাহান (৪৮) নামে আরেক নারী জানান, ওই দিন অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে হামলা করেছে। আমাদের গ্রামের কোন লোক ছিল না।

গট্রি ইউনিয়নের মনির নামে এক ব্যক্তি জানান, বালিয়া গট্রি এলাকা ও উপজেলা কেন্দ্রিক এলাকার বাড়িগুলোতে কোন পুরুষ সদস্য নেই। ঘটনার পর থেকে ওই সব এলাকার লোকজন পলাতক রয়েছে। তবে তিনি আশা করেন কোন নিরীহ লোক যেন হয়রানির শিকার না হন।

সালথার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতার নাম মামলায় দেওয়া হয়েছে এবং অনেকের নাম দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। যাদের নাম বলা হচ্ছে তারা এই ন্যাক্কারজনক হামলার সাথে জড়িত নয়। অহেতুক কাউকে হয়রানি যাতে না করা হয় সেজন্য তিনি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, হামলার সাথে জড়িতরা বিএনপি-জামাতের অনুসারী। কিন্তু মামলায় অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর নাম দেখা যাচ্ছে, তা দুঃখজনক।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, সালথা উপজেলায় তাণ্ডবের পর উপজেলার বিভিন্নস্থানে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ দিনরাত জোর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকায় পুলিশি অভিযানের কারণে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকাগুলো। তারপরও পুলিশ তাদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এই ঘটনায় যত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে কোন রকমের ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে ৫১ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৫ এপ্রিল) রাতে লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে জনতার সঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তার সহকারীদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে গুজব রটিয়ে উপজেলা পরিষদ, থানা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় ৫৮৮ রাউন্ড শটগানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। এতে আহত হন প্রায় শতাধিক। এ ঘটনায় রামকান্তপুর এলাকার জুবায়ের হোসেন (১৮) ও ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের মিরান মোল্যা (৩৫) নামে দুইজন নিহত হন।

এসব ঘটনায় ৬ ও ৭ এপ্রিল মোট ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৬ হাজার ৮০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এছাড়া হামলার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের দুটি কমিটি করা হয়েছে।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়