‘কত মানুষ ঘর পায়, মুই না পাং’
ফারুক আলম, লালমনির হাট || রাইজিংবিডি.কম
সোনাবি বেগম
‘মোর তিন শতক ভুঁই আছে। তাও খাস। ভালো একনা ঘর নাই। একনা ভাঙা ঘর। কোনো রকম পলি দিয়ে থাকি। ঘরোতে চার কোনা ছাওয়া নিয়া থাকোং। কত মানুষ ঘর পায়, মুই না পাং!’এভাবেই নিজের দুর্দশার বর্ণনা দিচ্ছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের ৩ নম্বর তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের ১নম্বর কাশীরাম মুন্সীর বাজার এলাকার আব্দুল জলিলের স্ত্রী সোনাবি বেগম (৫০)।
রাইজিংবিডিকে সোনাবি বলেন,‘আইতে ঘুমির পাং না, ঝড়িতে দিনোত তো ভালো থাকোং আর আইতে ঘর দিয়ে পানি পড়ে। ফাঁকা জাগা বাতাস ঢোকে ঘরের ভেতরোত।’(রাতে ঘুমাতে পারি না, বৃষ্টিতে দিনের বেলা ভালো থাকি, রাতে পানি পড়ে। ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাতাস ঢোকে)।
সোনাবি আরও জানান, প্রায় দশ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তিন বছর ধরে স্বামী অচল। এক ছেলে প্রতিবন্ধী। এখন পর্যন্ত ভাগ্যে জোটেনি ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা। ভিজিডি কার্ড কিংবা মাথা গোঁজার মতো একটা সরকারি ঘরও পাননি। এমনকি সরকারি কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচিতে নেই তার নাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকটি টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট্ট একটি ঘরে। সেখানে তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাস করছেন সোনাবি বেগম। তিনি জানান, অভাবের তাড়নায় দুই মেয়েকে অন্য বাড়িতে রেখে ঝিয়ের কাজ করতে হচ্ছে। আর এক ছেলে চায়ের দোকানে কাজ করে। বউ নিয়ে চলছে তার সংসার। আরেক ছেলে প্রতিবন্ধী। স্বামী একজন চানাচুর বিক্রিতা। কিন্তু আজ একবছর ধরে করোনার কারণে তার ব্যবসাও বন্ধ।
সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে একটু ভালোভাবে ঘুমাতেও পারেন না উল্লেখ করে সোনাবি জানান, কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতেও ভিজে যায় বিছানাপত্র। তবু বেঁচে থাকার তাগিদে জরাজীর্ণ ভাঙা টিনের চালায় রাতভর ছটফট করে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে থাকতে হয়। মুজিববর্ষে সরকারের কাছে একটি ঘরের জন্য আবেদন জানান সোনাবি বেগম।
এ বিষয়ে তুষভাণ্ডার ইউপি চেয়ারম্যান নুর ইসলাম বলেন, ‘আমি আজ (শুক্রবার, ৯ এপ্রিল) বিকেলে শুনেছি। ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও বলেছেন, এমন কেন হবে? আমরা তো সবাইকে ঘর দিচ্ছি। আমরা আবারও বরাদ্দ পেয়েছি। এবার তাকে ঘর দেওয়া হবে।’
/এনই/
আরো পড়ুন