বেপরোয়া ছিনতাইকারী, ঘটছে প্রাণহানিও
এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম
বগুড়ায় দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। প্রায় রাতেই শহরের কোথাও না কোথাও এই চক্রের কবলে পড়ছেন পথচারীরা। ছিনতাইতারীরা কেবল টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়েই নিচ্ছে না, অনেক সময় ছুরিকাঘাতও করছে। এতে আহত হওয়া ছাড়াও বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। চক্রটির কবলে পড়ে গত ২ সপ্তাহে ২ জনের প্রাণহানি ছাড়াও পুলিশের এক এসআইসহ ৫ জন আহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে বগুড়া শহরে কমপক্ষে ১৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ১৩এপ্রিল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত ১২টার পর ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন শফিউল্লাহ ওরফে পিপলু (৩৪) নামের এক দোকান কর্মচারী।
জানা গেছে, ঘটনার আগে পিপলু রাজাবাজারে মসলার দোকানের কাজ শেষে অটোরিকশায় বাড়ি 0ফিরছিলেন। শহরের বনানী-মাটিডালী সড়কের পাশেই তার বাড়ি। বাড়ির কাছাকাছি এসে অটোরিকশা থেকে নেমে হেটে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা তার চোখে-বুকে ছুরিকাঘাত করে। এসময় পিপলু চিৎকার দিয়ে দৌড়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে জঙ্গলে পড়ে যান। সেখানেই তিনি মারা যান। এ সময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আক্রমণকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এর আগে, গত ৪ এপ্রিল রাত ৯টায় সরকারি আজিজুল হক কলেজ ভবনের পেছনে বিশু মিয়া নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বিশু গ্রামের বাড়ি শিবগঞ্জ থেকে ফিরে হেটে সরকারি আজিজুল হক কলেজ চত্বর দিয়ে মেসে ফিরছিলেন। ছিনতাইকারীরা তাকে কলেজ চত্বরে ছুরিকাঘাত করে। এই ঘটনায় তার ছোট বোন জাহানারা বাদী হয়ে মামলা করলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এছাড়া ৪ এপ্রিল বিকেলে বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে এক নারীর চোখে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে দিয়ে ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায় ২০ হাজার টাকা। এর কয়েকদিন আগে শহরের সূত্রাপুর আজাদ পাম্পের গলিতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারান একজন চিকিৎসক ও একজন ব্যবসায়ী।
২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় আজিজুল হক কলেজ চত্বরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হন বগুড়া জেলা পুলিশে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এস আই) রবিউল ইসলাম। ওই ঘটনায়ও মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
১০ এপ্রিল শনিবার রতে দুই জায়গায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন ৪ জন। ভুক্তভোগীরা জানান, চন্দনবাইশা সড়কে শহরের চেলোপাড়া থেকে কৈপাড়া ব্রাক অফিস পর্যন্ত দুই এক কিলোমিটার রাস্তায় গত এক সপ্তাহে আরও ৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
তবে, গত ১৩ এপ্রিল সকালে অভিযান চালিয়ে ১১জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের কথা জানায় সদর থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে লোহার রড, চাকু ও চাপাতি উদ্ধার করার কথাও জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে শুভ নামের একজনের নামে ছিনতাইসহ ৬টি মামলার কথা বলা হলেও অন্যদের ব্যাপারে পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারেনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, ‘ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার দুজনের কেউই ছিনতাইকারীদের হাতে মারা যাননি। কারণ, তাদের দুজনের কাছেই টাকা ও মোবাইলফোন ছিলে। ছিনতাইয়ের ঘটনা হলে তো তাদের টাকা ও মোবাইলফোন নিয়ে যেতো।’
বিশু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারলেও কিছু ক্লু পাওয়া গেছে বলে জানা ওসি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাতে তিনটি স্পেশাল টিমসহ প্রত্যেকটি ফাঁড়ি এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে। এছাড়া ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানোসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্ধকারাচ্ছান্ন ও ফাঁকা জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করার চিন্তা করা হচ্ছে।’
/এনই/
আরো পড়ুন