ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ড্রামে থাকা তরুণীর লাশের মিলেছে পরিচয়, প্রেমিকসহ গ্রেপ্তার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১৯ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১০:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০২১
ড্রামে থাকা তরুণীর লাশের মিলেছে পরিচয়, প্রেমিকসহ গ্রেপ্তার ৪

গ্রেপ্তার প্রধান আসামি নিমাই চন্দ্র সরকার, ইনসেটে খুন হওয়া তরুণী ননিকা রাণী রায়

রাজশাহীতে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার তরুণীর লাশের পরিচয় মিলেছে।

রোববার (১৮ এপ্রিল) ভোরে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যরা ওই তরুণীর খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারকে (৪৩) গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নিমাই চন্দ্র সরকারকে ওই তরুণীর প্রেমিক লাশের পরিচয় জানান।

পরে নিমাইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিনভর অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাস চালকসহ তার আরও তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এছাড়া এ সময় জব্দ করা হয় লাশ বহনকারী মাইক্রোবাসটিও (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-১৮২৮)।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) পিবিআই রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তার পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারের বাড়ি পাবনার আতইকুল্লা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত। রাজশাহী পিবিআইয়ের একটি টিম রোববার সকালে নাটোরের লালপুরে বোনের বাড়ি থেকে নিমাইকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তিনি নিহত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করেন।

এছাড়া, গ্রেপ্তার নিমাইয়ের সহযোগীরা হলেন— রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ আদারিপড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাস চালক বিলশিমলা এলাকার আব্দুর রহমান (২৫)। পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে, খুন হওয়া ওই তরুণীর নাম ননিকা রাণী রায় (২৪)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর গ্রামের বাসিন্দা। ননিকা রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে সদ্য লেখাপড়া শেষ করেছেন। সর্বশেষ তিনি মহানগরীর একটি ক্লিনিকে  নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন ননিকা। রোববার রাতে তার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পিবিআই জানায়, মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ওই তরুণীকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়িটি জিআরপির কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র গত ৬ এপ্রিল ভাড়া নেন। তার স্ত্রীও পুলিশ কনস্টেবল। তিনি বগুড়ায় কর্মরত। রোববার বিকেলে পিবিআই সদস্যরা ওই বাড়িতে তদন্তে যায়।

পিবিআই আরও জানায়, কনস্টেবল নিমাই হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। জিঙ্গাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন ছয় থেকে সাত বছর ধরে ননিকা রাণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। সম্প্রতি ননিকা বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এ কারণে তাকে হত্যার পর ড্রামে লাশ ভরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পিবিআই।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ জানান, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিকভাবে জিঙ্গাসাবাদ করা হয়েছে। নিহত তরুণীর প্রেমিক কনস্টেবল নিমাই তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

আজ সোমবার তাদের আদালতে উঠানো হবে। আরও অধিকতর জিঙ্গাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিমাই চন্দ্র সরকার গত সাত বছর ধরে রাজশাহী জিআরপি থানায় কর্মরত। এর আগে তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশে (আরএমপি) কর্মরত ছিলেন। আরএমপির গোয়েন্দা শাখায় চাকরি করার সময় অফিসের পাশের বাড়ির এক কলেজ ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ভিডিও তৈরি করেন তিনি। ভিডিওটি কম্পিউটারের দোকান থেকে সেসময় মানুষের হাতে হাতে চলে যায়। একারণে সেসময় তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে নানা কৌশলে চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশে যোগ দেন নিমাই।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার মহানগরীর উপকণ্ঠ বাইপাস সড়কের সিটি হাটের কাছে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে এক তরুণীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় শাহ মখদুম থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।

রাজশাহী/তানজিমুল/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়