ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

গোলগাছ কেটে বসতিঘর, হুমকিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২০ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১১:০৮, ২০ এপ্রিল ২০২১
গোলগাছ কেটে বসতিঘর, হুমকিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ

বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ বাজার এলাকায় বন বিভাগের সৃজন করা গোলগাছ কেটে গড়ে উঠছে বসতঘর। দুই বছর ধরে এভাবে গোলগাছ কেটে অর্ধশতাধিক বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ, তেমনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও পড়ছে ঝুঁকির মধ্যে।

স্থানীয়রা বলছেন, বন বিভাগের যোগসাজশে একদল অবৈধ দখলদার দীর্ঘদিন ধরে এভাবে গোলগাছ কেটে সরকারি জমি দখলে নিচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন,  জনবল সংকটে দখলদারদের রোধ করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ষাটের দশকের শুরুর দিকে বরগুনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপর বাঁধ রক্ষার জন্য বন বিভাগ থেকে বাঁধের পাদদেশে গোলগাছ রোপণ করে বাগান গড়ে তোলা হয়। বাঁধের ২০০ ফুটের মধ্যে জমির মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই জমিতে বন বিভাগের বাবুগঞ্জ বিট কার্যালয়ের অধীনে ১৪ কিলোমিটার গোলগাছের বাগান রয়েছে।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) বাবুগঞ্জ বাজারসংলগ্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সৃজিত গোলগাছের বাগানের মধ্যে অর্ধশতাধিক বসতঘর রয়েছে। গত এক মাসে তৈরি করা হয়েছে অন্তত চারটি বসতঘর। গোলগাছ কেটে এসব ঘর তৈরি করা হয়েছে। খোকন নামের এক ব্যক্তি সেখানে ঘর তোলার জন্য গোলগাছ কেটে পরিষ্কার করেছেন। পাশে অস্থায়ী বসতঘরে রান্না করছেন নারী সদস্যরা। 

একইভাবে অবৈধভাবে দখল করে গোলগাছের বাগানে ঘর তুলছেন শাহ আলম ফকির ও মাকসুদা খাতুন দম্পতি। তারা বলেন, এটা তাদের নিজস্ব জমি। ঘর তোলার সময় পুলিশ ও বন বিভাগের লোক এসেছিলেন। তাদের কিছু দিয়ে থামানো হয়েছে। 

গোলগাছ কেটে বসতভিটা তৈরি করছেন আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি। আলমগীরের স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, ফরেস্টারের কাছ থেকে তারা এ বনের মধ্যে ঘর তোলার অনুমতি নিয়েছেন। 

এভাবে যত্রতত্র গোলগাছের বাগান কেটে বসতঘর নির্মাণের ফলে বণ্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা মমতাজুর রহমান বলেন, গোলগাছের বাগান ধ্বংস করে ঘর ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্ষার সময় এ বাগানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে বাগানের গাছ মরে যাবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। এসব ঘর ও বনের মধ্যে তৈরি রাস্তা দ্রুত সরিয়ে নেওয়া দরকার।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, যেভাবে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো বন উজাড় করা হচ্ছে, তাতে পরিবেশের ভারসম্য বিনষ্ট হবে। বাবুগঞ্জ বাজার এলাকার যে গোলগাছের বন ধ্বংস করা হচ্ছে, সেখানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এই বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধকে রক্ষা করার জন্যই গোলগাছের বন সৃজন করেছিলো বন বিভাগ। কিন্তু বন ধ্বংস করা হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এই বাঁধই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। দ্রুত এই গোলগাছের বনের মধ্যে যারা অবৈধভাবে বসতঘর নির্মাণ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

অভিযোগ উঠেছে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালী বাসিন্দারা বাঁধের বাইরে গোলগাছের বাগান উজাড় করে বসতঘর তুলছেন। এতে আর্থিক লেনদেনও হচ্ছে। তবে স্থানীয় বিট কার্যালয়ের কর্মকর্তা জানান, জনবলসংকটের কারণে এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। ১৭ জনের জনবলের স্থানে এখন ৪ জন জনবল রয়েছেন। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য তারা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মামলা করেছেন।

বাবুগঞ্জ এলাকার বিট কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে আমরা এই দীর্ঘ বন রক্ষা করতে পারছি না। জনবল না থাকার স্থানীয় লোকজন গোলগাছের বাগানে জোর করে বসতঘর তুলেছেন।’ তবে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা বেলায়েত হোসেন অস্বীকার করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আহম্মদ বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০০ ফুটের মধ্যে জমির মালিক পাউবো। জমি অবৈধভাবে দখল করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বন বিভাগের পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপ বন সংরক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অবৈধ দখলদারের প্রতিহত করতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবো।’
 

/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়