ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চাঁদা যখন তরমুজ!

বরগুনা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ২০ এপ্রিল ২০২১  
চাঁদা যখন তরমুজ!

বরগুনায় তরমুজ পরিবহনে চাাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তরমুজ কিনতে আসা পাইকারদের অভিযোগ, সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পরীরখাল এলাকায় স্থানীয় মনির ও মিলন নামের দুজন ব্যক্তির নেতৃত্বে  টাফি (পরিবহন ট্রাক্টর) প্রতি দুটি করে তরমুজ চাঁদা বাবদ আদায় করা হচ্ছে।  

এ বিষয়ে পাইকারদের কয়েকজন বরগুনা সদর থানা ও স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছেন।

পাইকাররা জানান, তারা বরিশালের বানরিপাড়া উপজেলা থেকে এসে বরগুনার এম বালিয়াতলী এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি তরমুজের খেত কিনেছেন। এসব তরমুজ মাঠ থেকে টাফিতে করে সড়কের কাছে ট্রাকে লোড করা হয়। ট্রাকে তরমুজ লোড করার সময় ওই এলাকায় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের ক্রয় করা তরমুজ থেকে জোর করে টাফি প্রতি দুটি করে তরমুজ চাঁদা হিসেবে নিয়ে নেন। 

পাইকার লিটন বেপারী বলেন, ‘টাফি থেকে ট্রাকে তরমুজ লোড করার সময় স্থানীয় মনির হোসেন ও মিলন নামের দুজন ব্যক্তি ও তাদের কয়েকজন সহযোগী টাফি প্রতি দুটি করে তরমুজ তাদেরকে দিতে হবে এমন দাবি করেন। এক পর্যায়ে তারা জোর করে বড় সাইজ দেখে দুটি করে তরমুজ নিয়ে নেন। তরমুজ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মারধরের হুমকি দেয় ওই ব্যক্তিরা।’ 

আকরাম নামের অপর এক পাইকার বলেন, ‘আমরা এখান থেকে ৩০ লাখ টাকায় তরমুজের খেত কিনেছি। এসব তরমুজ ট্রাকে করে ঢাকার গাজীপুর এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হবে। কিন্ত স্থানীয় কিছু লোকজন চাঁদা হিসেবে জোর করেই আমাদের গাড়ি থেকে তরমুজ নিয়ে যায়। আমরা দূরের মানুষ, তাদের কাছে একপ্রকার জিম্মি ও অসহায়।’ 

একই অভিযোগ পাইকার ইব্রাহীম, সাইফুল, রহিম ও ইমরানের।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খেত থেকে তরমুজের টাফি আসার সঙ্গে সঙ্গে মনির ও মিলন নামের দুজন ব্যক্তি সেখান থেকে দুটি করে তরমুজ উঠিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। এসময় রিপন বেপারী বাঁধা দিলে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে যান। 

এক পর্যায়ে এখান থেকে তরমুজ লোড করতে দেওয়া হবে বলে মনির হুমকিও দেন। পরে প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে মনির ও মিলন ওই স্থান ত্যাগ করেন।

তবে চাঁদা হিসেবে তরমুজ আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন মনির। তিনি বলেন, ‘আমাদের জমি ব্যবহার করে তরমুজ লোড দেওয়া হয়, এতে আমাদের জমির ক্ষতি হয়। যে কারণে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাদের কাছ থেকে তরমুজ চেয়েছিলাম। এটা জোর জবরদস্তি নয়, ক্ষতিপূরণ দাবি।’

স্থানীয় কয়েকজন তরমুজ চাষি জানান, ওই জমি মনির বা মিলনের না। জমির মালিক লিটন নামের একজন ব্যক্তি। তিনি এসবের সাথে জড়িত নন। বরং তার জমির ভূয়া মলিক সেজে মনির ও মিলনসহ কয়েকজন ব্যক্তি পাইকারদের কাছ থেকে তরমুজ আদায় করছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন তরমুজ চাষি বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এখানে এসব কাজ হয়। পাইকাররা দূর দূরান্ত থেকে এসেছেন। তারা ট্রাক লোড করার সময় মনির, মিলন এবং স্থানীয় আরও কয়েকজন ব্যক্তি জোর করেই তরমুজ নিয়ে যান। এমন অবস্থায় চলতে থাকলে পাইকাররা আর এখানে তরমুজ কিনতে আসবে না, এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

যোগাযোগ করা হলে জমির মালিক লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার জমি ব্যবহার করে টাফি থেকে তরমুজ ট্রাকে লোড করা হয়। আমি এ নিয়ে পাইকারদের কাছে কোনো টাকা বা কিছু দাবি করিনি। বরং মনির ও মিলনকে নিষেধ করায় তারা আমার ওপর ক্ষেপে গিয়ে বলেছে- আপনি চুপ থাকেন, যা করার আমরা করব।’

বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তরমুজ চাষী বা পাইকরা কাউকেই হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি।’

কাশেম/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়