ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ছেলের সামনে বাবাকে খুন, ছেলেসহ আহত ১০  

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ২৩ এপ্রিল ২০২১  
ছেলের সামনে বাবাকে খুন, ছেলেসহ আহত ১০  

নিহত হাবিল কাজী

রাজশাহীর বাগমারায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ছেলের সামনেই বাবা হাবিল কাজীকে (৪০) নির্মমভাবে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে প্রতিপ্রক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় নিহত হাবিল কাজীর ছেলে স্কুলছাত্র শওকত হোসেনসহ (১৪) কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

আহতদের রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল এবং বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই হাফিজুর রহমান ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যামামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

নিহত হাবিল কাজী আজিমুদ্দিন মাস্টারের ছেলে। তিনি পেশায় কৃষক। হাবিল কাজীর ছেলে শওকত মচমইল উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

গ্রেপ্তাররা হলেন— সিদ্দিকের স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৩৮), মা আকলিমা বেগম (৬০), তার ভাই হেলালুদ্দিনের স্ত্রী আলেফা বেগম (৪৪) এবং তার ভাই মাহবুবুর রহমান ওরফে মহব্বত (৩২)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাত ৮টার দিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হাবিল কাজীর সঙ্গে প্রতিবেশি সিদ্দিকুর রহমান, তার ভাই মো. আজাদ এবং তাদের চাচাত ভাই খলিলুর রহমানের তর্ককিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষ সিদ্দিকসহ তার বাড়ির পুরুষ এবং নারী সদস্যরা হাবিল কাজীর ওপর লাঠি ও দেশীয় ধারালা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলার সময় হাবিল কাজীর ছেলে শওকতসহ নিকটাত্মীয়রা এগিয়ে আসলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয়।

হামলা চলাকালে হাবিল কাজী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শওকত তার ওপর শুয়ে পড়ে তার বাবাকে রক্ষার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষের লোকজনকে তার বাবাকে না মারার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা শওকতের কথা শুনে নি। শেষ পর্যন্ত বাবাকে বাঁচাতে পারেনি শওকত। প্রতিপক্ষের হামলায় তার সামনেই চোখের সামনে নিহত হন বাবা হাবিল কাজী। আর শওকতসহ আহত হয় তার দাদা আজিমুদ্দিন মাস্টারসহ নিকটাত্মীয়রা।

বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন স্কুলছাত্র শওকত জানায়, তার চোখের সামনে বাবাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে। বাবাকে রক্ষার জন্য তার শরীরের ওপর পড়ে গেলেও রক্ষা করতে পারে নি। ‘আর মাইরেন না’ বলে আকুতি জানালেও রেহাই পাওয়া যায়নি। তাকেও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, একটি বিরোধপূর্ণ জমির দখল নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে প্রতিপক্ষ সিদ্দিক ও তার লোকজনদের সঙ্গে হাবিল কাজীর বাকবিতণ্ডা হয়। এর ফলে প্রতিপক্ষের লোকজন হাবিল কাজীর প্রতি ক্ষুব্ধ হন। এ ঘটনার জের ধরেই রাতে হাবিল কাজী এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

এদিকে, হামলার ঘটনার পরে রাতেই রাজশাহীর সদর সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

ওসি মোস্তাক আহম্মেদ জানান, আহতদের মধ্যে নিহতের চাচা আবদুর রাজ্জাক (৫৫) এবং ভাতিজা জুয়েলকে (২৮) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া নিহতের ছেলে শওকত এবং তার বাবা আজিমুদ্দিন মাস্টার বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আহত অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় নিহত হাবিল কাজীর ভাই হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সিদ্দিকসহ অন্য আসামিরা পালিয়ে গেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। এছাড়া ঘটনায় চারজনকে বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত হাবিল কাজীর মরদেহ রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আবার যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

রাজশাহী/তানজিমুল/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়