পালিয়ে যাওয়া ভারতফেরত ১০ করোনা রোগী উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম
পালিয়ে যাওয়া ১০ করোনা রোগীকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাতেই তাদের হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আনা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে, ভারতফেরত রোগীরা পালিয়ে যাওয়ায় করোনার ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন চিকিৎসক ও নাগরিক কমিটির নেতারা।
মহামারির কারণে ভারতফেরত করোনা পজেটিভ রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে চিকিৎসার নির্দেশ রয়েছে সরকারের। সেই অনুযায়ী বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ ভারতে থেকে আসা করোনা পজেটিভ রোগীদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে পাঠায়। হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ১০ জন রোগী গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) ও রোববার (২৫ এপ্রিল) পালিয়ে যান বা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি পুরোপুরি স্বীকার না করলেও পরে জানান, ভারতফেরত সাতজন ও স্থানীয় তিনজন করোনা পজেটিভ রোগী পালিয়ে গেছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপকুমার রায় জানান, করোনা রোগীরা জরুরি বিভাগে এসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ওয়ার্ডবয় তাদের সঙ্গে করে করোনা ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওয়ার্ডে পৌঁছানোর আগেই তারা পেছন থেকে পালিয়ে যান। বিষয়টি জানার পর তাদের ফিরিয়ে আনতে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার পর পুলিশ পলাতক রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তাদের শনাক্তে কাজ শুরু করেন। সোমবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরের পর তাদের সকলকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এরপর তাদের স্ব-স্ব জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের জিম্মায় আনা হয়। ইতোমধ্যে তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালের আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএমএ যশোরের সভাপতি ডা. কামরুল ইসলাম বেনু বলেন, ‘করোনা রোগী পালানো উদ্বেগজনক। আমরা দেখছি সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণে এখন ভারত শীর্ষে। আর সেখানে নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে, সেটি ৩০০ গুণ বেশি সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে। যারা পালিয়েছে তাদের দায়িত্ববোধ নেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় বিচরণের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে এনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা উচিৎ এবং আগামীতে যাতে এমনটি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
যশোর নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘আমি কোনোভাবে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী পালিয়ে যাবে। ভারত বর্তমানে করোনা সংক্রমণে শীর্ষে। এ ধরনের রোগী পালিয়ে যাওয়ার দায় কর্তৃপক্ষ কোনোভাবে এড়াতে পারে না। এর জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিৎ এবং যাদের গাফিলতি আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। একইসঙ্গে আগামীতে এ ধরনের রোগী যাতে পালাতে না পারে, সেই বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, যারা পালিয়েছেন কেবল তাদের ফিরিয়ে আনলে হবে না; এরমধ্যে তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদেরও কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনতে হবে। নইলে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি বা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শংকা থেকে যাবে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের তথ্যমতে, চলতি মাসে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতফেরত ২৭ জন করোনা রোগীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
রিটন/বকুল
আরো পড়ুন