ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জীবনযুদ্ধে দমে যাননি এক পা ও এক হাত বিহীন মিজানুর

আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩০ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১১:০০, ৩০ এপ্রিল ২০২১
জীবনযুদ্ধে দমে যাননি এক পা ও এক হাত বিহীন মিজানুর

একটি পা ও একটি হাত নেই, তাতেও দমে যাননি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মিজানুর রহমান (৫০)।  ঘোড়ার গাড়িতে অন্যের জমি থেকে ধান বহন করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি ।

৩৩ বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় তার বাম হাত ও বাম পা কাটা পড়ে। তবুও থেমে নেই তার জীবন। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে চলছে তার জীবন-জীবিকা।  

তার বাড়ি ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়ি গ্রামে। এক সময় নিজ উপজেলাতেই ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন তিনি। এখন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী গ্রামে ঘোড়ার গাড়িতে ধান বহন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

স্ত্রী, ৩ ছেলে ও একটি প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অন্যের জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন মিজানুর রহমান।

জীবন যুদ্ধে হার না মানা মিজানুর রহমান শোনালেন তার জীবন যুদ্ধের গল্প। তিনি বলেন, আমার বয়স যখন ১৭ বছর, তখন একটি বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বাম হাত ও বাম পা কেটে ফেলতে হয়। আমার বাবা মৃত জব্বর আলী ফকির ছিলেন অতি দরিদ্র কৃষক। অভাবের কারণে আমার সঠিক চিকিৎসাও করাতে পারেননি তখন। তারপর থেকেই শুরু হয় আমার জীবন যুদ্ধ। বর্তমানে আমার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াদুল ইসলাম (১১) আমার কাজে সহযোগিতা করে। মেঝো ছেলে রাজিকুল ইসলাম (৭) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় ও ছোট ছেলে রাজিবের বয়স ১ বছর এবং ৪ বছরের মেয়ে আজমিরা প্রতিবন্ধী।

তিনি বলেন, ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন তার আয় ২৫০-৩০০ টাকা। কোনো দিন এমনও যায় যে, কোনো কাজই থাকে না। শেষ সম্বল বলতে আমার তিনটি ঘোড়া ছাড়া আর কিছুই নেই। সরকারিভাবে কোনরকম সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি। আমি পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি। সরকারিভাবে আমাকে সহযোগিতা করা হলে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারবো। পঙ্গুত্ব আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারও কাছে হাত না পেতে নিজের জীবিকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি।

মিজানুর রহমানকে আশ্রয় দেওয়া মো. নজু আলী বলেন, মিজানুর রহমানকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন মানবিক কারণে। কেননা, আমাদের সমাজে এখনো অনেক মানুষ সুস্থ থাকার পরও সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জীবন চালাচ্ছেন। কিন্তু মিজানুর রহমান তা করেননি। তিনি পঙ্গুত্বকে হার মানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তমাল হোসেন জানালেন, আপনাদের মাধ্যমে মিজানুর রহমানের বিষয়টি জানতে পারলাম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে সহযোগিতা করা হবে এবং আমি আমার ব্যক্তিগত সাধ্য থেকেও তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।

নাটোর/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়