ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পুলিশের ভুলে নিঃস্ব হাসিনা অবশেষে কারামুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ৪ মে ২০২১   আপডেট: ২০:২৫, ৪ মে ২০২১

সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় পুলিশের ভুলে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর কারাবাস করতে হয়েছে টেকনাফের সহায় সম্বলহীন নারী হাসিনা বেগমকে। 

এই দেড় বছরে হাসিনাকে মুক্ত করতে বিক্রি করে দিতে হয়েছে একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই ভিটে বাড়িও। পুরো সংসারটিই তার তছনছ হয়ে গেছে। 

তবে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের আইনজীবী এক সময়ের তুখোড় সাংবাদিক গোলাম মাওলা মুরাদের আইনি লড়াইয়ের বিজয় হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৮ মে) দুপুরে হাসিনাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আদালত নির্দেশ দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন হাসিনা বেগম (৪০)।

আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ রাইজিংবিডিকে জানান, হাসিনা বেগম শুধুমাত্র পুলিশের ভুলেই দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বিনা দোষে কারাবাস করেছেন। প্রকৃতি আসামি হাসিনা আক্তার (২৫) কারাগার থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। 

তার অনুপস্থিতিতে আদালত হাসিনা আক্তারকে ৬ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিলে টেকনাফ থানা পুলিশ দেড় বছর আগে ২৫ বছর বয়সী হাসিনা আক্তারের বদলে ৪০ বছর বয়সী হাসিনা বেগমকে আদালতে সোপর্দ করে। 

সেই থেকে বিনা দোষে কারাবাসে ছিলেন হাসিনা বেগম। এই সময়ে হাসিনার নাবালক সন্তান ও তার আত্মীয় স্বজনরা হাসিনাকে মুক্ত করতে ভিটেবাড়িও বিক্রি করে দেন। কিন্তু সঠিকভাবে বিষয়টি আদালতের নজনে আনেনি কেউ।

আইনজীবি গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, এই অমানবিক বিষয়টি জানার পরপরই চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে টেকনাফ থানা এবং কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হাসিনার বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে টেকনাফ থানা পুলিশ তাদের ভুল স্বীকার করে। চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষও কারাবাসে থাকা হাসিনা এবং একই মামলায় পূর্বে গ্রেপ্তার হয়ে জামিন পাওয়া হাসিনা একজন নয় বলে প্রতিবেদন দেয়। 

প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরই মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞা নির্দোষ হাসিনা বেগমকে মুক্তির নির্দেশ দেন। বিকেলে এই নির্দেশনা কারাগারে জরুরী বাহক মারফত পৌঁছালে দ্রুত হাসিনাকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

মুক্তির পর কারাফটকে হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তারের পর আমি বার বার পুলিশকে বলেছি আমার নামে কোনো মামলা নেই। আমি নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে আমাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। দেড় বছরে আমার সংসার তছনছ হয়ে গেছে। আমার ভিটেবাড়িও বিক্রি করে দিতে হয়েছে।’ 

নিজের কারামুক্তির জন্য তিনি আদালত এবং আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাসিনা বেগম।

এদিকে আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, হাসিনা বেগমকে বিনাদোষে কারাভোগ করার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে এবং হাসিনার বিনাদোষে কারাবাসের ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হবে।

রেজাউল করিম/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়