ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জনশূন্য রেলস্টেশন ও একজন স্টেশন মাস্টার

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৬ মে ২০২১   আপডেট: ১১:৪৯, ৬ মে ২০২১
জনশূন্য রেলস্টেশন ও একজন স্টেশন মাস্টার

গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল জংশনের প্লাটফর্মে উদাস মনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহজাহান মিয়া (৬০)। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছেন। দেখে মনে হচ্ছে, কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

শাহজাহান মিয়া এই জংশনের স্টেশন মাস্টার। বুধবার (৫ মে) সকালে সুনশান-নিস্তব্ধ স্টেশনে এভাবেই দেখা তাকে। ফাঁকা স্টেশনে দুই একজন পথশিশুকেও দেখা গেলো। তাদের সঙ্গেই যেন শাহজাহান মিয়ার প্রাণের সখ্যতা। কখনো কখনো তাদের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলছেন, কখনো বা উদাস মনে তাকিয়ে আছেন রেললাইনের দীর্ঘ পথের প্রান্তে।

চলমান লকডাউনে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের সব ধরনের ট্রেন যোগাযোগ। হই-হুল্লোড় ভরা রেলস্টেশনগুলো এখন সুনশান-নিরব। তেমনি জয়দেবপুরের এই জংশনও নিরব। হকার নেই, যাত্রী নেই, ট্রেনের হুইসেল নেই। সবকিছু না থাকার মধ্যেও সক্রিয় আছেন স্টেশন মাস্টার শাহজাহান মিয়া।

ফাঁকা ষ্টেশনে কথা হলো স্টেশন মাস্টার শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ৩২ বছর ধরে বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত আছেন। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। বাবা ফজলুর রহমানও ছিলেন রেলওয়ের একজন কর্মকতা। পিতার চাকরিসূত্রে তার কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলিতে। সেখানেই উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বৈবাহিক জীবনে শাহজাহান মিয়ার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। তারা দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে।

শাহজাহান মিয়া জানান, কর্মজীবনে প্রথমে সে ১৯৮৫ সালে মাদ্রাসার শিক্ষকতা ও পরবর্তীতে মালিনুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে বাবার ইচ্ছাতেই স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসাবে চাকরি নেন এবং ঈশ্বরদীর পাকশিতে কাজ শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় স্টেশন মাস্টার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। গত প্রায় চার বছর ধরে জয়দেবপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর এক মাস পরেই তার কর্মজীবনের ইতি ঘটবে। তখন সময়টাকে তিনি কিভাবে কাজে লাগাবেন তাই নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা করছেন। বাকি জীবনটা ঘরে বসে না থেকে কাজে লাগাতে চান তিনি।  এই দীর্ঘ সময়ে তার ট্রেন, স্টেশন, পথশিশু, সাধারণ মানুষ, নিয়মিত চলাচল করেন এমন যাত্রীরা যেন তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হয়ে গেছে। তাইতো ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও নিয়মমাফিক সকালেই স্টেশনে এসে উপস্থিত হন তিনি। নিয়ম করে প্রতিদিন সেই সকালে আসেন, আবার বিকেলে বাসায় ফিরে যান।

তিনি বলেন, ‘ট্রেনের শব্দ না শুনলে আর রেললাইন দেখতে না পারলে দিনটা ভালো কাটে না। রেলস্টেশন, রেলগাড়ী, রেলের মানুষ এগুলো আমার নিত্যদিনের সঙ্গী।'

শাহজাহান মিয়া জানান, তার দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। কখনো ডিউটিতে ফাঁকি দেননি যার ফলে তিনি  সরকারের কাছে চার বছর ৭ দিন ছুটি পাওনা রয়ে গেছেন।

তিনি জানান, জয়দেবপুর স্টেশনে তার চাকরিকালীন সময়ে অনেক অনিয়ম বন্ধ হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলে স্টেশনের জমি দখল করে একটি পক্ষ দোকান বসিয়ে বাণিজ্য করে আসছিলো। সেগুলি উচ্ছেদ হয়েছে। সীমানা ওয়াল নির্মাণ হয়েছে। স্টেশনে মাদকাসক্তদের আড্ডা ছিলো সেগুলো বন্ধ হয়েছে। স্টেশনে টিকেটের কোঠা বেড়েছে। ওয়েটিং রুম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। স্টেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।

তিনি জানান, এখনো স্টেশনে অনেক সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে জনবল আরো দরকার। এখানে ৪৭ জনের জনবল প্রয়োজন কিন্তু আছে মাত্র ২৯ জন।

গাজীপুর/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়