লিবিয়ার বন্দি ২৪ যুবক, নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি
মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
লিবিয়ায় মাফিয়াদের কাছে বন্দি রয়েছেন মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকার ২৪ জন যুবক। তাদেরকে শারিরীক নির্যাতন করে সেই ভিডিও পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ জাহিদ খান ইউছুব নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে।
ভুক্তভোগীদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে চিহ্নিত করে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্রের সদস্যরা। এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। দালালচক্র বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে তারা।
গত সোমবার (৩ মে) থেকে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটকা রয়েছে মাদারীপুরের ২৪ জন যুবক। মাফিয়ারা নির্যাতন করে সেসব ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুলাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামের এরশাদ হোসেন জনি নামে এক যুবককে লিবিয়ার একটি ঘরে বন্দি করে শারিরীক নির্যাতন করে টাকা দাবি করছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামে গিয়ে জানা গেছে এই গ্রামেরই ৪ যুবকসহ মাদারীপুরের ২৪ জনকে বন্দি করে নির্যাতন করা হচ্ছে টাকার জন্য।
জাহিদ খান ইউছুব
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার চাছার গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ খান ইউছুব এলাকার পরিচিত দালাল। ৪/৫ বছর ধরে তিনি মানব পাচারের সঙ্গে সংযুক্ত। তার মাধ্যমে প্রায় ৩০০ যুবক লিবিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছেন। যার বেশির ভাগ সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালী পৌঁছেছে।
এসব লোকজন পাঠাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। জাহিদ খানের কাজ হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তাদের সংগ্রহ করা। প্রত্যেকের সঙ্গে ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা চুক্তি হয়। রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করেছেন লিবিয়া। সেখান থেকে অবৈধ পথে ইতালী।
জাহিদ খানের মাধ্যমে মাদারীপুরের যেসব লোকজন লিবিয়া গেছেন তাদের অনেকে এখনো যেতে পারেনি। তারা লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ তার মাধ্যমে যাওয়া ২৪ জন যুবক লিবিয়ার মাফিয়ারা আটক করে টাকার জন্য নির্যাতন করছে। জাহিদ খান এলাকার প্রভাবশলী হওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গতকাল বুধবার (৫ মে) এই জাহিদ খানকে পাঁচটি পাসপোর্টসহ আটক করেছে সদর থানা পুলিশ।
লিবিয়ায় বন্দি সদর উপজেলার ধুলাইল ইউনিয়নের চার জন হলো—চাছার গ্রামের এরশাদ হোসেন জনি মিয়া ও হিফজু হাওলাদার এবং ধুরাইল ইউনিয়ন সরদারকান্দি গ্রামের মো. আসাদুল খান ও মো. জাহিদুল ইসলাম। বাকি ২০ জনের বাড়ি মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়।
মাফিয়ার কাছে আটক হিফজু হাওলাদারের বাবা হাবু হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলেকে জাহিদ খান ইউছুফের মাধ্যমে দুমাস আগে লিবিয়া পাঠাই। তার সাথে আমার ৮ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল। ২ লক্ষ টাকা আমি ইতোমধ্যে তাকে দিয়েছি। বাকি টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল। গত দুদিন ধরে আমার ছেলেসহ মোট ২৪ জন লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটক রয়েছে। তাদেরকে নির্যাতন করে সেই ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি করছে মাফিয়ার লোকজন। আমরা গরিব মানুষ। এতো টাকা কোথায় পাবো? আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে চাই।’
মাদারীপুর সদর থানার এসআই মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মানব পাচারের অভিযোগ জাহিদ খানকে আটক করা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে প্রেরণ করা হবে।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। একজনকে আটক করা হয়েছে।’
বেলাল রিজভী/সনি
আরো পড়ুন