বটবৃক্ষের ছায়াতলে শান্তির পরশ
সাইফুল্লাহ হাসান || রাইজিংবিডি.কম
চারিদিকে হাওর। নেই কোনো বাড়ি। দেখা মিলে না গাছগাছালিরও। উত্তপ্ত রোদে কৃষকরা মাঠে কাজ করে যখন ক্লান্ত হন, তখন তাদের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর এই বিশ্রাম নেন পেখম মেলে থাকা একটি বটগাছের নিচে।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার আমতৈলে হাকালুকি পারের এই বটগাছটি হাওরের বাসিন্দাদের সবারই চেনা। শুধু মানুষই নয়, পাশাপাশি গরু ছাগল ভেড়াসহ অন্যান্য পশু পাখিরাও প্রচণ্ড রোদের সময় এর ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। হাওরের পানি ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে বিশাল জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বট প্রাঙ্গণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে ওই এলাকার ইউপি সদস্য করুণাময় দাশ গাছটি রোপণ করেছিলেন। ক্ষেতে আবাদের সময় হাকালুকি হাওরে যখন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষরা আসতেন, তখন রোদে তাদের অনেক কষ্ট হতো। তাদের জন্যই তিনি বট গাছটি রোপণের চিন্তা করেন। যাতে গাছটির ছায়ায় বসে শান্তি পেতে পারে মানুষসহ পশু পাখিরাও। এখন চলছে বোরো মৌসুম। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেতে মানুষরা আসছেন ধান কাটতে। প্রতিদিন তাদেরকে এই বট গাছটির নিচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, ধান মাড়াই- খড় শুকানো থেকে শুরু করে সব কিছুই এই গাছের নিচেই আমরা করি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রোজা রেখে আমরা ধান কাটি, এই গরম সহ্য করার মতো নয়। এক নাগাড়ে ধান কাটার পর দুপুরের দিকে এসে এই গাছের নিচে সবাই মিলে বসে গল্প করি। প্রতিদিন দুশ থেকে আড়াইশ মানুষ বট গাছের নিচে এসে একত্র হই। এই বট গাছটি ছাড়া আশেপাশে আর কোনো গাছ নেই।
কৃষক ফজলু মিয়া বললেন, আমাদের মনে হয় আমরা প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনে আছি। পাঁচ মিনিট এই গাছটির নিচে বসলে আমাদের ঘুম চলে আসে। তাই আমরা সবাই মিলে গাছটির যত্ন করি। যাতে করে আগামীতেও মানুষ এসে এই গাছের নিচে আশ্রয় নিতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য করুণাময় দাশ বলেন, গাছটির জাত কাঠালি বট। এখানে জায়গা আছে ২১ শতক। প্রায় ১৫ শতক জায়গা জুড়ে এই বট গাছটি। আনুমানিক ২০১০ সালে গাছটি আমি নিজেই রোপণ করেছি। গাছটি রক্ষা করার জন্য প্রতি বছর আমরা সবাই মিলে নিচে বাঁধ দেই , যাতে বন্যা বা ঝড় তুফানে গাছটির কোনো ক্ষতি না হয়। প্রতিদিন প্রচুর লোক এখানে এসে আশ্রয় নেয়, দেখে আমার ভালো লাগে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে রোদের সময় সবচেয়ে বেশি কৃষক গাছটির নিচে আসে।
তিনি বলেন, বর্ষার সময় কৃষকরা মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাত হয়, তখন এই গাছটির নিচে এসে তারা আশ্রয় নেয়। গত ২ বছর আগে এখানে সরকারিভাবে একটা টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে। এটা থেকেও মানুষ অনেক উপকৃত হচ্ছে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য এরকম উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি এই মহৎ উদ্যোগকে সম্মান জানাই। বর্তমানে গাছপালার অভাবে উষ্ণতা দিন দিন বাড়ছে।
মৌলভীবাজার/টিপু
আরো পড়ুন