ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ধুঁকছে বেনারসি পল্লী, বিপাকে মালিক-শ্রমিক

আমিরুল ইসলাম, রংপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৮ মে ২০২১  
ধুঁকছে বেনারসি পল্লী, বিপাকে মালিক-শ্রমিক

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেনারসি পল্লী এখন সুনসান। আগের মতো আর তাঁত বোনার খুটখাট শব্দ শোনা যায় না।  করোনায় দেশ‌ব‌্যাপী লকডাউন থাকায় বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন। ফলে তাঁতের কাঁচা মাল আনা-নেওয়া করতে পারছেন না কারখানার মালিকরা। তাই কাজও পাচ্ছেন না তাঁতশিল্পীরা। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকায় এই প্রায়  বন্ধের পথে তাঁতপল্লী।  শনিবার (৮ মে) দুপুরে উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু গ্রাম ঘুরে-ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই গ্রামে ৩ বছর আগেও শতাধিক মালিকের ছোট বড়  প্রায় ৪৫০ তাঁত মেশিন ছিল। এসব মেশিনে কাজ করতেন  প্রায়  সাড়ে তিন হাজার নারী-পুরুষ। আর এখন পরিবহন বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল সরবারহ ও শাড়ি প্রসেসিং করতে না পারায় হতাশায়  ডুবছেন কারখানা-মালিকরা। যার প্রভাব বিরূপ পড়েছে শ্রমিকদের ওপরও।

তালুক হাবু এলাকার তাঁত কারখানার প্রথম উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগেও এই এলাকার প্রায় প্রত্যেক ঘরে তাঁত  ছিল। ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা ছিল। আর এখন ব্যবসা গুটিয়ে এই পল্লীতে ছোট বড় ৮-১০টির বেশি কারখানা নেই।’

একই এলাকার আয়শা বেনারসির কারখানা ও শোরুমের মালিক আলমগীর ইসলাম জানান, ‘গত ১৫ বছর ধরে অনেক চড়াই-উৎরাই পরিবেশ পার করে ধরে রেখেছি এই কারখানাকে। বর্তমানে তার কারখানায় ১২টি মেশিনে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। করোনা কালে তার কারখানা প্রায় বন্ধের উপক্রম।’

স্থানীয় শোরুমগুলেতে তাদের উৎপাদিত শাড়ি না নেওয়ার অভিযোগ করে আলমগীর বলেন, ‘উৎপাদিত শাড়িগুলো সহজে প্রসেসিং ব্যবস্থা, কাঁচামাল সরবরাহ সহজ হলে এই ব্যবসা টিকে রাখা সম্ভব। নয়তো অচিরেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে অন্য চিন্তা করতে হবে।’ 

কারখানার শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি শাড়ি বুনতে সময় লাগে ৭-৮ দিন। আর মজুরি পাই ২ হাজার ৫০০ টাকা‌। এই টাকায় সংসার চালানো কষ্ট। করোনা সংক্রমণ রোধে পরিবহন বন্ধের কারণে শাড়ি বিক্রি করতে না পারায় মালিকও নিয়মিত মজুরি দিতে পারছেন না। তাই,  সরকারের কাছে আমাদের জন‌্য প্রণোদনার দাবি জানাই।’ 

তাঁত কারখানাগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ১০-১২টি বিপণন শোরুম। এসব শোরুমে ব্রোকেট কাতান, পিরামিড কাতান, মিরপুরী রেশমি কাতান, বেনারসি কসমস, চুনরি কাতান, প্রিন্স কাতান শাড়ি বিক্রি হয়। তবে, করোনার কারণে তেমন বিক্রি হচ্ছে না। 

নিশাত শোরুমের বিক্রেতা রবিউল বলেন, ‘করোনার কারণে শোরুমে বেচা-কেনার অবস্থা খুব খারাপ। আর কয়েক দিন পরেই ঈদ। অথচ এই সময়ে আমাদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে।’

রেখা বেনারসি শোরুমের ম্যানেজার বলেন, ‘করোনার কারণে শোরুমে ক্রেতারা আসতে পারেন না। ফলে বেচা-কেনা খুব কম। ঈদের এই সময়ে অন্যান্য বার দিনে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বিক্রি হতো, এখন সেখানে ৫০ হাজার টাকার পোশাকও বিক্রি হচ্ছে না। কর্মচারীর বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

উল্লেখ্য, রংপুর শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গঙ্গাচড়া উপজেলাতেও গড়ে উঠেছে বেনারসি পল্লী। ২০০৫ সালে প্রায় ১০০ জন তাঁতী এই এলাকায় বেনারসি পল্লী গড়ে তোলেন।  

/এনই/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়