ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সিলেটে ঈদের বাজারে জনসমাগম, বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৮ মে ২০২১   আপডেট: ১১:৩৬, ৯ মে ২০২১
সিলেটে ঈদের বাজারে জনসমাগম, বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি

ঘড়ির কাটায় সময় তখন রাত সাড়ে ৯টা। সিলেট নগরের ব্যস্ততম জিন্দাবাজার পয়েন্টে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছিলেন,  প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশায় করে শপিং করতে আসা জনসাধারণের কারণেই নগরের সবকটি সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি লেগে থাকে মধ্যরাত অবধি।

পবিত্র রমজানের ঈদের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি। এ কারণে শেষ সময়ে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে সিলেটের সব বিপণিবিতান আর শপিংমলে। দিনের বেলা কিছুটা ফাঁকা থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে জনসমাগম। এ সময় বিকিকিনিও জমে উঠে, দম ফেলার ফুসরত থাকে না দোকানিদের।

আর জনসমাগম বেশি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। ক্রেতাদের কারও মুখে আছে মাস্ক, আবার কারও নেই। আর দোকানিরা এ বিষয়ে উদাসীন। তাদের মাস্ক ছাড়া দোকান পরিচালনা করতে দেখা গেছে। মানা হচ্ছে না সরকারের নির্দেশিত দোকান বন্ধের সময়সীমাও।

শনিবার (০৮ মে) রাতে নগরের জিন্দাবাজার, বারুতখানা, বন্দরবাজার, লামাবাজার, নয়াসড়ক ও কুমারপাড়ার শপিংমল ও ব্র্যান্ডহাউসগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। অবশ্য ব্র্যান্ডহাউসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা গেলেও অধিক জনসমাগমের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জিন্দাবাজারের ব্লু ওয়াটারে কথা হয় বালুচরের বাসিন্দা শিহাবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, গত বছরের ঈদে মার্কেট বন্ধ ছিল। এ কারণে তখন পোশাক কেনা হয়নি। তাই এ বছর আর তা মিস করতে চাচ্ছেন না। বিশেষ করে বড়রা পোশাক না কিনলেও ছোটদের ঈদের পোশাক কেনার আবদার রাখতে বাজারে আসা।

গৃহিণী সুমিনা ইসলাম বলছিলেন, বড়দের জন্য কেনাকাটা না করলেও চলে। কিন্তু বাচ্চাদের আবদার রাখতেই হয়। আর দিনের বেলা বাসার বিভিন্ন কাজ থাকে বলে আসা হয় না। তাই ইফতারের পরে রাতে সবাইকে নিয়ে মার্কেটে এসেছেন। ভিড়ের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানার সুযোগও নেই। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকিও আছে। তবে তারা সবাই মাস্ক পরে যতটুকু সেইফ থাকা যায়, সেই চেষ্টা করছেন বলেও জানালেন।

দোকানিরা জানান, করোনার কারণে গত বছরের ঈদে ব্যবসা হয়নি। এছাড়াও পুরো বছরে লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারের ঈদে ব্যবসার সুযোগ পেয়েছেন। ঈদ ঘনিয়ে আসার কারণে ক্রেতাদের সংখ্যা বেড়েছে। ক্রেতাদের সমাগম বেশি হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে মন্তব্য তাদের।

শপিংমল আর বিপণিবিতান ছাড়াও  ভিড় আছে ফুটপাতের কাপড় আর জুতার দোকানেও। দম ফেলার ফুসরত নেই তাদেরও। তবে তাদের ভয় রয়েছে উচ্ছেদের। এ কারণে তারা ভ্যানগাড়ি নিয়ে প্রস্তুত থাকেন সবসময়ই। ফুটপাতের কাপড়ের দোকানি আলমগীর বলেন, ফুটপাতে দোকান বসতে দেওয়া হয় না। তবে ঈদের কারণে অভিযান হচ্ছে না। সেই সুযোগে তারা বসেছেন। কিন্তু প্রস্তুতও থাকতে হয় তাদের, যেন অভিযানে আসার আগেই তারা সেখান থেকে সরে যেতে পারেন।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, জনসমাগম বেশি হওয়ার কারণে শপিংমল আর মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে পড়ছে। ক্রেতাবিক্রেতা কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তবে ব্যবসায়ীদের তারা স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও মাস্ক পরে বাজারে আসার অনুরোধ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে,  শনিবার (০৮ মে) সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলায় মহামারি করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২১ হাজার ১১৯ জনের। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ হাজার ৮৭৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩৬৬ জনের।

নোমান/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়