রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশের একটি অসহায় পরিবারের গল্প
মো. মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম
প্রতিবন্ধী লিমার পাশে মা ফাহিমা আক্তার
লিমা আক্তারের বয়স ১৮ বছর। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির দুই বছর পার না হতেই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। এতে তার পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। সেই থেকে ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছে মেয়েটি।
হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ওলিপুরের রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে নানা বাড়িতে লিমা আক্তারের বসবাস। দরিদ্র বলে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি লিমার পরিবার। তবে যতটুকু সাধ্য ছিলো চেষ্টার ত্রুটি করেনি। সহায় সম্বল মেয়ের পেছনে খুইয়ে পরিবারটি আরো অসহায় হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘ ১৬ বছর প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে আছে লিমা। মা ফাহিমা আক্তারই তার প্রধান সহায়। ফাহিমা বললেন, পৃথিবীর সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিলে মা তো তার সন্তানকে ফেলে দিতে পারেন না। প্যারালাইসিস হওয়ার পর থেকেই অসহায় মেয়েটিকে বয়ে বেড়াচ্ছি।
অভাবে সংসারের কথা বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন মা। জানালেন, ঘর থেকে বের হয়ে একটু ঘোরানোর জন্য নেই তার হুইল চেয়ার খুবই জরুরী। অথচ তাদের একটি হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্যও নেই। ঘরেই একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে দিন কাটছে মেয়েটির।
সরেজমিনে এই মায়ের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেলো তার কষ্টভরা বুকে জমে থাকা আরো কথ। চোখে পানি আসে তার। ছলছল চোখে ফাহিমা বললেন, সাড়ে ৫ বছর হলো সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার স্বামী হাবিবুর রহমান। প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে নিয়ে তিনি আরো অসহায় হয়ে পড়েন। দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ে লিমাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেই থেকে বাবার বাড়িতেই সন্তানদের নিয়ে তার বসবাস।
তিনি বলেন, মেয়ের দেখভাল করায় কোন চাকরি করতে পারছেন না। এ অবস্থায় প্রতিবন্ধী মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে কঠিন জীবন পার করছেন। একদিকে বেঁচে নেই স্বামী। অন্যদিকে নেই আয় রোজগার। এ যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’। আবার চলছে ভয়াবহ করোনাকাল। এ অবস্থায় তিনি কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন।
তিনি জানান, শত কষ্টের মধ্যেও চেষ্টা করে মেয়েকে সুস্থ করার জন্য অনেক স্থানে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি। সেই থেকে শুধুমাত্র কিছু পরিমাণে ভাত খেতে পারছে। এ সময়ে সরকার ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সহযোগীতা এবং মেয়ের চলাফেরার জন্য একটি হুইল চেয়ার কামনা করেছেন।
কিছুদিন হলো স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে লিমার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানালেন।
স্থানীয় চিকিৎসক অক্ষয় কুমার বাবুল বলেন, শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা করানো গেলে লিমাকে সুস্থ করা যেতো। প্যারালাইসিস হওয়ার বেশ কিছু দিন পর আমার কাছে নিয়ে আসলে এ পর্যন্ত আমি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজিউর রহমান ইমরান বলেন, প্রতিবন্ধী লিমা আক্তারকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই মিলে সহায়তা করা উচিৎ। তাহলে এ মেয়েটির উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, লিমার কথা জেনে অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি। ঈদের পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে একটি হুইল চেয়ার দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।
হবিগঞ্জ/টিপু
আরো পড়ুন