ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

দেয়াল যখন ক্যানভাস

আরিফুল ইসলাম সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১১ মে ২০২১  
দেয়াল যখন ক্যানভাস

চির সবুজের মাঝে পিচঢালা পথ আর পাশে লাল ইটের দেয়াল। ছোট ছোট স্থাপনার এই দেয়ালগুলো একসময় বিভিন্ন পোস্টার আর লেখনীতে ভরে থাকতো। আর সেই দেয়ালগুলোই এখন পরিণত হয়েছে রঙিন ক্যানভাসে।

ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলোতে শোভা পাচ্ছেন দেশের চলচ্চিত্র ও সাহিত্য অঙ্গনে অবদান রাখা প্রয়াত গুণীজনদের ছবি। সেই সাথে বাঙলার লোকজ ঐতিহ্যকেও ধারণ করছে দেয়ালগুলো। পাশাপাশি বিদেশি চলচ্চিত্রের দৃশ্যপট নিয়ে আঁকা দুটি গ্রাফিতি বেশ প্রসিদ্ধ হয়েছে।

লাল ইটের উপর চমৎকার সব গ্রাফিতিগুলো চোখে পড়বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে। সবুজে ঘেরা অপার সৌন্দর্য্যের ক্যাম্পাসে আঁকা এসব গ্রাফিতি নজর কাড়ছে সবার। ঢাকার অদূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালে এসব গ্রাফিতির স্রষ্টা শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মামুর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মামুর নিজ উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরে দেয়ালগুলোকে রাঙিয়ে তুলেছেন ক্যানভাসে। প্রথম অবস্থায় নিজ উদ্যােগ ও খরচে একাই গ্রাফিতি আঁকলেও এখন সঙ্গী হয়েছেন তারই অনুষদের বেশ ক'জন শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা অন্য আর্থিক সহযোগিতা না নিয়ে নিজেদের জমানো অর্থ দিয়ে এঁকেই চলেছেন নানান চিত্র। বিভিন্ন সময় আঁকা ক্যানভাসের ছবি তুলে মামুর পোস্ট করেছেন তার ফেসবুক ওয়ালেও। লিখে জানিয়েছেন তার অনুভূতির কথা।

তিনি লিখেছেন, 'এসব আঁকা দেয়ালের মুহূর্তেরা,/ঝুলে থাক ফেসবুকের দেয়ালে/একটা রঙিন ক্যাম্পাস, ছড়িয়ে পড়ুক সারা সভ্যতায়!'

মামুর জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ইটের সুন্দর দেয়াল গুলো যাতে রাজনৈতিক লেখনী, বিভিন্ন পোস্টার আর স্প্রে রঙের কারণে নষ্ট না হয়ে যায় সেই চিন্তা থেকেই দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকার চিন্তা আসে তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলোকে তিনি রাঙানোর পরিকল্পনা শুরু করেন। দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই মামুর প্রথম গ্রাফিতি আঁকতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার আঁকা গ্রাফিতিগুলো নজর কাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

ক্যাম্পাসের কোথায় কি আঁকা রয়েছে?

ক্যাম্পাসের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ সংলগ্ন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের জন্য ব্যবহৃত ঘরের দেয়ালে আঁকা হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের তিন কিংবদন্তী এটিএম শামসুজ্জামান, হুমায়ূন ফরীদি এবং দিলদার। ট্রান্সপোর্টে যাত্রী ছাউনির পিছনে আঁকা বাংলা সাহিত্যের সর্বেসর্বা তিন ‘দা’ মানে ঘনাদা, টেনিদা আর ফেলুদা। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দেয়ালে আঁকা হয়েছে জাতির পিতার প্রতিকৃতি।

এছাড়া ট্রান্সপোর্ট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের যাত্রী ছাউনি এবং অনুষদের ভিতর ও বাইরের দেয়ালে আঁকা হয়েছে গ্রাফিতি।

যে ভাবে শুরু দেয়ালের ক্যানভাস

আবদুল্লাহ মামুর জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে ভর্তির হওয়াট পরপরই তিনি এখানকার সবুজ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যান। পাশাপাশি লাল ইটের তৈরি সবুজের মাঝে থাকা স্থাপনাগুলো মন কাড়ে তার। কিন্তু দেয়ালগুলোতে সাঁটানো বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোস্টার, স্প্রে রঙের এলোমেলো ও রাজনৈতিক লেখা তাকে পীড়া দিতে থাকে।

মামুর বলেন, ‘অফিসিয়ালভাবে দেয়ালে লেখা এমনিই নিষেধ। তারপরে আবার পোস্টার মারে। তাছাড়া স্প্রে রঙ দিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি করে দেয়াল নষ্ট করে। প্রশাসনকে বলার পরেও তাদের কোন মাথাব্যথা নাই এই ব্যাপারে। তাই ভাবলাম যে এইরকমতো (ক্যানভাস) করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই করা।’

‘প্রতিবছর আঁকছি একটু একটু করে। তবে ২০১৭ সাল থেকেই নিয়মিত আঁকছি। ডিপার্টমেন্ট ওইভাবে কিছুই করে নাই কখনও। সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে করছি। প্রথম দুই-তিনটা আমাদের নিজেদের উদ্যােগে করছি।’

মামুর বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি আগে সে রকম কোন আকর্ষণ ছিলো না। এইটা এখানে আসার পরেই হইছে। দুই-একটা আগে করতাম মজা লাগতো করতে। তারপরে ভাবলাব যেহেতু ফ্রিটাইম থাকে যখন তখন করাই যায়। এই ভাবেই শুরু করছি। তারপরে ভাবলাম যেহেতু পজেটিভ একটা ভাব আসতেছে। আর ভালো একটা আইডেন্টিটিও আসতেছিলো ক্যাম্পাসের। তাই এমন কিছু একটা করি যাতে পজিটিভ একটা ভাব আসুক সবার ভিতরে।’

কতজন মিলে গ্রাফিতি আঁকছেন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘কতজন বলতে ওইরকম কোন রেগুলারিটি নাই। মনে করেন আমি থাকি। আবার একেক দিন যার মনে হয় সে আসে। আর অপর্ণ অধিকারী সিক্ত, সেও নিয়মিত থাকে। আর বাদ বাকীরা মনে করেন আসে যায়। মানে বলার মতো ওইরকম আর নাই।’

অর্থের যোগানের বিষয়ে বলেন, ‘ওই রকম কোন স্পন্সর নেওয়া হয় না। ক্যাম্পাসের যদি হয় সেক্ষেত্রে তারা দিতে পারে। মনে করেন ক্যাম্পাসের বড় ভাই, জুনিয়রস, বন্ধুবান্ধব এরা যে রকম দিছে সেই অনুযায়ী করছি আমরা। প্রথম দুই-তিনটা আমরা নিজেদের পকেটের টাকায় করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা অন্যকোন মাধ্যম থেকে এই কাজে উৎসাহ পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু শিক্ষক যারা বলে যে, ভালো ব্যাপারটা। মানে গুটি কয়েক। আর বাদবাকি যারা আছে তাদের কোন মাথাব্যথা নাই। মানে তারা বাধাও দেয় নাই আর করতে উৎসাহও দেয় নাই।’

গ্রাফিতি বা ছবি আঁকা নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, ‘প্রত্যেকটা জেলা শহরে আমার আঁকার ইচ্ছা ও প্ল্যান আছে। মনে করেন বাংলাদেশের ট্যুরিস্ট স্পট যেমন- সেন্টমার্টিন, বান্দরবান হোক সেটা। এরকম কিছু জায়গায় দেয়াল পাইলে আমরা ওইখানে করতে চাই।’

সাভার/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়