ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে করোনার হানা, দুশ্চিন্তায় কারা প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ১২ মে ২০২১   আপডেট: ০৯:৩৭, ১২ মে ২০২১
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে করোনার হানা, দুশ্চিন্তায় কারা প্রশাসন

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কারাগারের ৩ বন্দি, জেলর ও তার স্ত্রী, ডেপুটি জেলর, কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন স্টাফ। বর্তমানে তারা কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

এ নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা কারা প্রশাসন। সংক্রমণ প্রতিরোধে তারা নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সরকার দেশে ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষণা করে। এরপর থেকে কারাগার কর্তৃপক্ষ বন্দিদের সাথে আত্মীয় স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এছাড়া আদালত সীমিত আকারে চলায় কারাগারে নতুন আসামি আসা কমে যায়। তারপরও কর্তৃপক্ষ করোনারোধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে ছিল কারাগারে নতুন আসা আসামিদের ভিন্ন সেলে রাখা, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব মেনে আসামিদের রাখা।

এ কারণে কারাগারে করোনার প্রথম ধাপে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। শুধু কয়েকজন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হন। অবশ্য তাদেরকে কারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোয়ারেন্টাইনে রেখে সুস্থ করে তোলা হয়। পরবর্তীতে গত শীতে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমে আসলে এসব নিয়ম-কানুন উঠে যায়। স্বাভাবিক নিয়মে চলতে থাকে কেন্দ্রীয় কারাগারের সকল কার্যক্রম। এরপর চলতি বছরের গত মার্চ মাস থেকে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে সার্বিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। এসময়ে কারাগারে মানা হয়নি তেমন কোন নিয়ম-কানুন। এ কারণে বর্তমানে কারাগারে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এবার এর থেকে বাদ যায়নি কারারক্ষী, কর্মকর্তা ও আসামিরা। বর্তমানে কারাগারের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। যা মোকাবেলা করতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কারা অভ্যন্তরে ৩ জন বন্দি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন হাজতি ও একজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বর্তমান জেলর ও তার স্ত্রী, ৩ জন ডেপুটি জেলর ও কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন কারা স্টাফ। বর্তমানে তারা কারা স্টাফ কোয়ার্টারে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। 

এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আসামিদের সাথে আত্মীয়-স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম। জরুরি ডিউটি রুটিন ছাড়া কারারক্ষীদের দিয়ে অন্য কোন কাজ করানো হচ্ছে না।

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানান, বর্তমানে কারাগারে যে তিনজন বন্দি আসামি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে কারা অভ্যন্তরে পৃথক ওয়ার্ডে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। একজন ফার্মাসিস্ট ও ডাক্তারের মাধ্যমে তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের খাবারে লেবুর শরবতসহ রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধিমূলক খাবার ও ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এর আগে আরো ৪ জন বন্দি আসামি করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলেই তারা সবকিছু করতে পারছেন না। তাদেরও কিছুটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্বল্প কয়েকটি ওয়ার্ডে আসামিদের রাখা হয়। ইচ্ছা করলেই তারা নতুন ওয়ার্ড তৈরি বা বৃদ্ধি করতে পারেন না। এ কারণে যা আছে তার মধ্যেই করোনা পরিস্থিতিতে তাদেরকে ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা উদ্বিগ্ন রয়েছেন, আদালতের মাধ্যমে প্রতিদিনই নতুন করে আসা আসামিদের নিয়ে।

তারা ধারণা করছেন, নতুন আসা আসামিদের মাধ্যমেই কারাগারে করোনা ছড়িয়েছে। যদিও তাদের নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বিশেষ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কারাগারে নতুন আসা আসামিদের তারা মাস্কসহ স্যানিটাইজার দিচ্ছেন। এরপর তাদের পরিহিত কাপড় ধুয়ে ও সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। যাতে করোনা সংক্রমণ থেকে অন্য আসামিদের দূরে রাখা যায়।

এ ব্যাপারে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলর তুহিন কান্তি খান বলেন, কারাগারে বন্দিদের সুরক্ষায় তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া কারাগারের ৩ জন ডেপুটি জেলরসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ প্রতিরোধে তারা কারা অভ্যন্তরে নানা পদক্ষেপ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এক্ষেত্রে কারাগারে নতুন আসা আসামিরা তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মাধ্যমেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

রিটন/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়