ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈদে মায়ের কোলে ওঠা হলো না আজমীরার

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৪ মে ২০২১   আপডেট: ১২:৩৬, ১৪ মে ২০২১
ঈদে মায়ের কোলে ওঠা হলো না আজমীরার

মাকে নিয়ে ছোট বোনের সঙ্গে ঈদ করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদারীপুরের গ্রামের বাড়িতে ফিরছিল কিশোর রিফাত। কিন্ত ফেরিতে দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যু হয়। এতে মায়ের কোলে আর ওঠা হলো না রিফাতের ছোট বোন ৭ বছর বয়সী আজমীরার।

বুধবার (১২ মে) দুপুরে ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে মারা যান মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বালিগ্রামের নিপা বেগমসহ পাঁচজন। ফেরি দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারে ঈদ আনন্দ নেই। শোকের অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে।

রিফাতের চাচা উজ্জল বেপারাী জানান, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে শত শত যাত্রীর সঙ্গে ফেরিতে ওঠে রিফাত ও তার মা। ফেরিতে ছিল গাদাগাদি ভিড়। এ অবস্থায় প্রচন্ড গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফেরি বাংলাবাজার ঘাটের কাছে পৌঁছলে রিফাতের মা অসুস্থবোধ করেন। তখন মায়ের জন্য কয়েক দফা পানি আনে রিফাত। এ সময় ধাক্কা-ধাক্কিতে তিনটি শিশু পড়ে গেলে তাদের কাধে করে রক্ষা করে রিফাত। একজন বৃদ্ধকে পানি দিয়ে জীবন বাঁচায় সে। কিন্তু নিজের মায়ের শেষ করুণ পরিণতি রুখতে পারেনি। চিরদিনের জন্য মাকে হারিয়ে ফেলে রিফাত।

রিফাত বলেন, ‘আমি পানি পান করিয়ে অনেকের জীবন বাঁচাইছি। অথচ আমার মাকেই বাঁচাতে পারলাম না। মাকে নিয়ে ঈদের আনন্দ করতে আসছিলাম কিন্তু মা তো এখন আর নেই।’

বাংলাবাজর ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১২ মে) দুপুরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মানদীতে একটি রো রো ফেরিতে আসছিল কয়েকশত যাত্রী। ফেরির যানবাহন রাখার খোলা জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রখর রোদের তাপে ফেরি যখন বাংলাবাজার ঘাটের কাছাকাছি ফেরি আসে, তখন অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে যাত্রীরা। পানির পিপাসা আর গরমে ঘটনাস্থালে মারা যায় পাঁচজন। ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাটে ভিড়লে অসুস্থ যাত্রীদের মধ্যে চারজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়াও ফেরির পন্টুনে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। অসুস্থ অর্ধশতাধিক যাত্রীকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ঘাটে দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আরামকাঠি গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৭), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের মজিবর রহমানের স্ত্রী শিল্পী বেগম (৪০), বরিশালের মুলাদি থানার নুরুদ্দিন আকন (৪৫), শরীয়তপুরের নরীয়া থানার আনছুর আলী  (১৫) এবং মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার গৃহবধূ নিপা বেগম।

আল আমিন বেপারী নারায়ণগঞ্জে স মিলে ও তার স্ত্রী নিপা বেগম পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। স্ত্রীর মৃত্যুতে এখন তিনি কীভাবে সন্তান লালন-পালন করবেন সেই ভাবনায় দিশেহারা। আল আমিন বেপারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘নিপাকে বলেছিলাম তুমি গরম সহ্য করতে পার না। তোমার বাড়ি যাওয়ার দরকার নেই। শুনলো না। এখন আমাদের ঈদের আনন্দ নেই। ছোট ছোট বাচ্চা রেখে গেছে। এখন ওদের নিয়ে কীভাবে বাঁচবো?’

বেলাল/বকুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়