ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দায়িত্ব পালনে ঈদ-আনন্দ খুঁজে পান বিজিবি সদস্যরা

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ১৪ মে ২০২১   আপডেট: ১৫:৩১, ১৪ মে ২০২১
দায়িত্ব পালনে ঈদ-আনন্দ খুঁজে পান বিজিবি সদস্যরা

দায়িত্ব পালনের মাঝেই তারা খুঁজে পান ঈদের আনন্দ। সবকিছু ছাপিয়ে সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতই তাদের ব্রত। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কর্মরতরা যখন পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন তখনও দেশকে নিরাপদ রাখতে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবি সদস্যরা। 

সবাই যখন ঈদের উৎসব আমেজে, তখন বহিঃশত্রু আক্রমণ হতে দেশকে রক্ষার জন্য সীমান্তে পাহারা দিচ্ছেন সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবির সদস্যরা। দেশের প্রতিটি সীমান্ত অঞ্চলে রয়েছে বিজিবির ২৪ ঘণ্টার পাহারা।  

দিন অথবা রাত; হোক প্রখর রোদ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি। সীমান্তে অস্ত্র হাতে দায়িত্ব পালনরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের এসব চৌকস সদস্যদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক চোরাকারবারি বন্ধ থেকে শুরু করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সদাজাগ্রত বিজিবি সদস্যরা। 

বছর ঘুরে এসেছে ঈদ। যে কোনো একটি ঈদ পরিবারের সঙ্গে করার সুযোগ পান বিজিবি সদস্যরা। অন্য ঈদে পরিবার ছাপিয়ে দায়িত্ব পালনই হয়ে উঠে তাদের মূল ব্রত। তবে ঈদের মতো এমন বিশেষ দিনগুলোতে মনে পড়ে পরিবারের সদস্যদের।

বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত দায়িত্বরত বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের সিপাহী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন সত্যিই কষ্ট হয়। শত কষ্টের মাঝেও এইটুকু শান্তনা দেয় নিজেকে, এই ঈদে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছি, সামনের ঈদে ছুটিতে যাব এবং পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবো।     

ল্যান্স নায়েক মো. সামাউন নবী বলেন, ‘প্রত্যেক বছর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হয় না। এই ঈদে কিছু সহকর্মী পরিবারের সঙ্গে ঈদ করছে। হয়তো আগামী ঈদে তারা সীমান্তে দায়িত্ব পালন করবে, আর আমরা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো। এভাবেই আমরা প্রতিবছর ঈদ করে থাকি। সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পবিত্র দায়িত্ব। এটা একটা সম্মানজনক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে পেরে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করি।’  

নায়েক নুর উদ্দিন বলেন, ‘পরিবার ছাড়া ঈদ করা কষ্টকর। কিন্তু কষ্ট হলেও মেনে নিতে হবে; যেহেতু সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছি, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি; তাই দেশ ও দেশের জনগণ নিরাপদে ঈদ উদযাপন করছে। এতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে না পারলেও কষ্টটা অনেক লাঘব হয়।’   

সুবেদার মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের দিন অবশ্যই পরিবারের কথা মনে পড়ে। এক সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতেও ইচ্ছে করে। কিন্তু সীমান্তরক্ষার স্বার্থে সীমান্তেই ঈদ করতে হয়। কারণ এটি পবিত্র দায়িত্ব। ঈদের দিন সীমান্তে দায়িত্বরত সবাই একসঙ্গে আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। একইসঙ্গে বাটালিয়নের অধিনায়ক সাহেব ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।’

‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ স্লোগান নিয়ে ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি আজও রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে থাকে প্রথম সারিতে। সবাই যখন প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত তখনও সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে নির্ঘুম রাত কাটছে অনেক বিজিবি সদস্যের। তাদের প্রত্যাশা সীমান্ত পাহারার মাধ্যমে নিরাপদ থাকবে দেশ এবং দেশের মানুষ।

করোনা পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন আরও চ্যালেঞ্জিং। অনেক সহকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাই পিপিই পরে দায়িত্ব পালন করছেন অনেক বিজিবি সদস্য। সীমান্ত কিংবা চেকপোস্ট; কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বিজিবির নারী সদস্যরাও। তারাও বলছেন; তাদের কাছে পরিবারের আগে দেশ বড়। 

রেজুখাল চেকপোস্টে দায়িত্বরত বিজিবির নারী সদস্য রোকসানা আক্তার বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা আলাদা আনন্দের। কিন্তু আমরা যেহেতু সীমান্তরক্ষী; সেহেতু অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ, মাদক চোরাচালান দমনও দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাই পরিবারের সঙ্গে সবসময় ঈদ করা হয় না।’ 

আরেক নারী সদস্য তনিমা আক্তার বলেন, ‘পরিবার ছাড়া ঈদ করছি, মনে কষ্ট থাকতেই পারে। কিন্তু দায়িত্বটা আমাদের কাছে সবার আগে। এই দায়িত্ব পালন করতে পেরে সত্যিই গর্বিত; দায়িত্ব পালনই আমাদের কাছে মূল উদ্দেশ্যে।’  

মিয়ানমারের সঙ্গে বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্ত রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এই সীমান্তে বিজিবির একটি রিজিয়নের আওতায় রয়েছে দুটি সেক্টর ও ৭টি ব্যাটালিয়ন। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েক হাজার বিজিবি সদস্য।
 

/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়