ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ আত্মহত‌্যার চেষ্টা করেননি, ‘হুমকি দিয়েছিলেন’

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ১৯ মে ২০২১   আপডেট: ১৯:২৭, ১৯ মে ২০২১
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ আত্মহত‌্যার চেষ্টা করেননি, ‘হুমকি দিয়েছিলেন’

খুলনায় প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই)-এর মহিলা হোস্টেলে কোয়ারেন্টাইনে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) সৈয়দা ফেরদৌসী বেগম। আর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলছেন, ওই নারী কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হওয়ার কৌশল হিসেবে ‘আত্মহত‌্যার হুমকি’ দিয়েছেন। বুধবার (১৯ মে) বিকেল তারা রাইজিংবিডিকে এই তথ‌্য জানান।

এর আগে, মঙ্গলবার (১৮ মে) খুলনা জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ‌্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  মঙ্গলবার রাতে কোয়ারেন্টাইনে  ধর্ষণের শিকার ওই নারী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন।  এই সময় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা অন্য নারী ও  পুলিশ সদস‌্যরা তাকে রক্ষা করেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হোস্টেল সুপার বলেন, ‘এ ধরনের ভুয়া খবর কিভাবে প্রচার পেলো, তা বোধগম্য নয়। কারণ ঘটনা শোনার পরই আমি ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা ওই নারীর কক্ষে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি।  এ সময় তাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে ও খাওয়া-দাওয়া করতে দেখেছি।’ 

সৈয়দা ফেরদৌসী বেগম  বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার নারীর আত্মহত্যার চেষ্টার খবর সম্পূর্ণ ভুয়া। এ ধরনের কিছুই  ঘটেনি। কারণ আমি ভেতরে থাকি। আমি মঙ্গলবার রাতেই তার রুমে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছি। আজও (বুধবার) সকালে ও দুপুরে তার রুমে খাবার দেওয়ার সময় গেছি। আত্মহত্যা চেষ্টার কোনো বিষয়ই এখানে নেই। তবে, দীর্ঘ ১৩ দিন স্বামী-সন্তান ছেড়ে থাকায় তার মন খারাপ, এটা ঠিক। এ কারণে তিনি দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন।’

হোস্টেল সুপার বলেন, ‘মঙ্গলবার ওই নারীর করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে। আজ রিপোর্ট আসার কথা। রিপোর্ট নেগেটিভ পেলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে বুধবার বিকেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ওই গৃহবধূর। তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যা করতে যাবো কেন?  ১৫/১৬ দিন ধরে এক জায়গায় আটকে রয়েছি। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করছি, যেন আমাকে ছেড়ে দেয়। তারা সে কথা মানছে না। এ জন্য মন খারাপ থাকায় দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম।’ 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘ওই গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি।  তিনি হুমকি দিয়েছিলেন। কোয়ারেন্টাইনে রাখার প্রথম থেকেই তিনি  চলে যাওয়ার জন‌্য চাপ দিয়ে আসছেন। কিন্তু ১৪ দিন পূরণ না হওয়ায় তাকে ছাড়া যাবে না, এমন কথা বলায় তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন।’ 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘ওই নারী ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেন। তার পাসপোর্ট-ভিসা কিছুই নেই। তিনি ঝিনাইদহ থেকে পালিয়ে আসেন। পরে তাকে ধরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।’

ধর্ষণের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি  
এদিকে, ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা প্রশাসনে। 

এই প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি মঙ্গলবার রাতে। পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে মিল রয়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে,  বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।’

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্তি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহানাজ পারভীন। 

উল্লেখ‌্য, গত ৪ মে ভারত থেকে ফিরে ওই নারী খুলনার পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় মহিলা হোস্টেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। গত ১৪ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দায়িত্বরত এএসআই মোখলেছুর রহমান তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ আনেন ওই নারী। এরপর গত ১৭ মে খুলনা সদর থানায় মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন তিনি। এ ঘটনায় এএসআই মোখলেছুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।  

/এনই/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়