ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আম্ফানের ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি কয়েক লাখ মানুষ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ২০ মে ২০২১   আপডেট: ২০:৩১, ২০ মে ২০২১

দীর্ঘ এক বছর পার হলেও প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। জমিতে তীব্র লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। 

বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে এখনও তটস্থ এসব এলাকার মানুষেরা। যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন রযেছে। চিকিৎসা, সুপেয় পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষ। 

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তারা জানান, ২০২০ সালের (২০ মে) মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘর-বাড়ি ধসে পড়ে ২ হাজারেরও বেশি। এখনো ডুবে আছে শতাধিক ঘর-বাড়ি। 

কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদ-নদীর অন্তত ২০টি পয়েন্ট ভেঙে শাতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়া আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নে ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে অসংখ্য কাচা ঘরবাড়ি ও টিনের চাল উড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও এলজিইডির ৮১ কিলোমিটার সড়ক। 

এছাড়া জেলায় সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ভেসে যাওয়ায় চিংড়ি চাষিদের ১৭৬ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরায় ৬৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার আম ও ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ টাকার কৃষি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। 

সেখানকার লোকজন বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছেন। আম্ফানের এক বছর পার হলেও উপকূলীয় এলাকায় গৃহহীনের সংখ্যা এখনও দুই শতাধিক। বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর খুপড়ি ঘরে বসবাস তাদের।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর এলাকার মো. ইয়াছিন আলী ও কুড়িকাউনিয়া গ্রামের আবু সালেহসহ অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা। সুপেয় পানির তীব্র সংকট। বেড়িবাঁধের অবস্থাও নাজুক। 

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসিম কুমার চক্রবর্তী জানান, আম্ফানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার আশাশুনিসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেননি। 

তিনি আরও জানান, একই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে বিচ্ছিন্ন। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধগুলো রয়েছে ভয়াবহ অবস্থায়। দুয়েকটি জায়গায় সংস্কার করা হলেও অধিকাংশ জায়গায় রয়েছে ভয়াবহ ফাটল। যেকোনো সময় প্রবল জোয়ারের চাপে তা আবারও ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। 

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, ইতোমধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধের মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগরিই এর সুফল ভোগ করবে উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, আম্ফানে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছিল এ অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলোর। প্রধানমন্ত্রী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন অতিসত্ত্বর ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের। 

তিনি আরও জানান, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন, পানিউন্নয়ন বোর্ড, সেনাবাহিনীসহ জেলার সংশ্লিষ্ট সংস্থার অক্লান্ত পরিশ্রমে বেড়িবাঁধগুলো প্রাথমিকভাবে সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। 

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠী আয়লা থেকে আম্ফান পর্যন্ত সাত থেকে আটটি দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রতিবারই বিভন্ন আশ্বাস পেয়েছেন তারা। সেসব আশ্বাসে আর বিশ্বাস নেই উপকূলবাসীর। তাদের একটাই দাবি, টেকসই ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ।

শাহীন গোলদার/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়