ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লকডাউনে অনীহা রোহিঙ্গাদের

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২২ মে ২০২১   আপডেট: ১৬:০৯, ২২ মে ২০২১
লকডাউনে অনীহা রোহিঙ্গাদের

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি ক্যাম্পে চলছে লকডাউন। কিন্তু এই লকডাউন কোনোভাবেই মানছেন না রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পে অবাধে ঘুরাফেরা, সামাজিক দুরুত্ব না মানা, মাস্ক ব্যবহারে অনীহাসহ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে চরমভাবে। 

শনিবার (২২ মে) সকালে সরেজমিনে উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি ক্যাম্প ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। 

লকডাউন করা উখিয়ার কুতুপালংস্থ ক্যাম্প ২ ডব্লিউয়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাঈল জানান, এখন ক্যাম্পে লকডাউন দিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু ঘরে তীব্র গরম; থাকা যাচ্ছে না। ক্যাম্পের ঘরগুলো ত্রিপলের তৈরি। এতে গরমের কারণে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। এরপর ঘরে মানুষও বেশি, ঘিঞ্জি পরিবেশ। তাই ঘরে থাকতে না পেরে দোকানপাটে বসে আছি। প্রশাসন দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলেছে কিন্তু বন্ধ তো রাখা যাচ্ছে না। গরমে ঘর থেকে লোকজন বের হয়ে এসে দোকানে বসে এবং সবাই মিলে গল্প করি।

উখিয়ার কুতুপালংয়ে ক্যাম্প ২ ডব্লিউ ক্যাম্প ৩, ক্যাম্প ৪-এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউন করা হয়েছে এই ক্যাম্পগুলো। প্রবেশদ্বারে টাঙানো হয়েছে লকডাউনের সাইনবোর্ড। যার জন্য প্রবেশদ্বারে বসানো হয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কড়া পাহারা। যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য রয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। তবে প্রবেশদ্বারে এই অবস্থা দেখা গেলেও ক্যাম্পের ভেতরে দৃশ্য ভিন্ন। লকডাউনের মাঝে ক্যাম্পগুলোতে অবাধে ঘুরাফেরা করছে রোহিঙ্গারা। দোকানপাট খুলে চলছে আড্ডা। নেই স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক ব্যবহার। খেলাধুলায় মেতে আছে রোহিঙ্গা শিশুরা।

ক্যাম্প ২ ডব্লিউ, ডি-৪ ব্লকের বাসিন্দা হামিদ হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের কারণে প্রশাসন মাস্ক ব্যবহার ও ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। এছাড়াও ঘরের আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে এবং ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ফেলতে নিষেধ করেছে। কিন্তু ক্যাম্পে তো প্রচণ্ড গরম। এই গরম সহ্য করতে না পেরে ঘরের বাইরে চলে আসি। এরপর পুলিশ এসে বাইরে দেখলে মাস্ক ব্যবহার করতে বলে তাড়িয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। তারপরও করার কিছুই নেই। এই লকডাউনে গরম সহ্য করতে না পেরে ঘরের বাইরে চলে আসি।’

ক্যাম্প ২ ডব্লিউ ইস্ট ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘ক্যাম্পে করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ার কারণে লকডাউন দিয়েছে; এটা মেনে নিয়েছি। ক্যাম্পে তো মানুষ বেশি; এই হিসেবে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে এটা মেনে নিতে পারছি না। ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশ, একে অপরের সঙ্গে বসতে হচ্ছে, থাকতে হচ্ছে; এরপর গরমও বেশি।’

ক্যাম্প ৪ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘লকডাউন তো ক্যাম্পের জন্য নতুন একটা বিষয়। প্রশাসন অনেক নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো নতুন নতুন হওয়াতে মানা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই নির্দেশনাগুলো শুধু আমার নয়; ক্যাম্পের সব রোহিঙ্গার মেনে চলা দরকার।’  

এদিকে, ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণার পর সেখানে নেই কোনো প্রচারণা। তবে সংক্রমণ রোধে লকডাউন করা ক্যাম্পগুলোর পাশাপাশি পাশ্ববর্তী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সচেতন করা হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের।

কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের (ভারপ্রাপ্ত) ইনচার্জ মো. মিছবাউল আলম জানান, ক্যাম্পে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের নির্দেশনায় সবার সঙ্গে সমন্বয় করে লকডাউন করা ক্যাম্পগুলোর পাশ্ববর্তী ক্যাম্পগুলোতেও সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদেরকে দ্রুত আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে। আর যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে করোনা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মূলত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্প করোনার সংক্রমণ রোধে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আর লকডাউন কার্যকরে দায়িত্ব থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. তারিকুল ইসলাম জানান, উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি ক্যাম্পকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। যা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। লকডাউন ঘোষণা কারণ হচ্ছে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। 

মো. তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, ক্যাম্পগুলো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তাই ৫টি ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকরে এপিবিএন কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দায়-দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের। অন্যান্য সবার সহযোগিতায় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের লকডাউন মানাতে সচেতন করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। লকডাউনের বিষয়গুলো বুঝানো হচ্ছে, টহলরত মাইকিং করা হচ্ছে। যাতে রোহিঙ্গারা লকডাউনের বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলে।  

উল্লেখ্য, শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯০৮ জন এবং এদের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন রোহিঙ্গা। এ পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪১ হাজার ৫’শোর বেশি রোহিঙ্গার।

রুবেল/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়