ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে গৃহবধূদের শীতল পাটি বুনন

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ১ জুন ২০২১   আপডেট: ১৫:১৩, ১ জুন ২০২১
হারিয়ে যাচ্ছে গৃহবধূদের শীতল পাটি বুনন

সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদপুরের হাইমচরের প্রত্যন্ত এলাকায় গৃহবধূ ও কিশোরীদের শখের কাজ ছিল শীতল পাটি বুনন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রঙ-বেরঙের শীতল পাটি তৈরি হতো। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গৃহবধূরা হয়েছেন সৌখিন। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম হাইমচরের ঐতিহ্য বহনকারী শীতল পাটি। 

স্থানীয়রা জানান, এক সময় গ্রামের বাড়িতে অতিথিরা এলে প্রথমেই বসতে দেওয়া হতো শীতল পাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্যও ছিল বিশেষ ধরনের সৌন্দর্যবর্ধক শীতল পাটি। আর তাই হাইমচরের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শীতল পাটি বুনন ছিল পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু এখন আর সেসব দেখা যায় না।

বিবাহযোগ্য কন্যার পাটি বুনন জ্ঞানকে বিবেচনা করা হতো বিশেষ যোগ্যতায়। গরমে শীতল পাটির কদর ছিল বেশ। কেননা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের রৌদ্রময় দুপুরে এই পাটি দেহ-মনে শীতলতা আনে। বর্তমান আধুনিকায়নে পাটি শিল্পের স্থান দখল করে নিয়েছে সুরম্য টাইলস, ফ্লোরম্যাট ও প্লাস্টিকসামগ্রী ও চাদর। হাইমচরের বিভিন্ন গ্রামের বধূ-কন্যাদের নান্দনিক এ কারুকার্য এখন হারিয়ে গেছে সৌখিনতায়।

হাইমচরের চরভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদির মিজির স্ত্রী হাসিনা বেগম জানান, শীতলপাটি বুনন ছিল তার পেশা। তিনি এ শীতলপাটিকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়েছিলেন। হাতপাখা, নামাজের চিউনী, খাটে ঘুমানো পাটি বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন শীতল পাটির তেমন চাহিদা না থাকায় তিনি বুনন ছেড়ে দিয়েছেন। তার মতো শত শত নারীও ছেড়েছেন এ ‘শীতল পাটি’ বুনন। কারণ, পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পাটি বুনতাম, এখন আর এসব চলে না।

সরেজমিনে হাইমচরের চরভাঙ্গা, কৃষ্ণপুর, লামচরী ও মহজমপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুয়েকটি ঘরে শীতল পাটি থাকলেও নেই বুনন কার্যক্রম। এ পাটি বুননের জন্য ব্যবহৃত মোস্তাইক গাছের তেমন উৎপত্তি নেই। মূলত বেচাবিক্রি না থাকাতেই কারো যেন আগ্রহ নেই এসব শিল্প টিকিয়ে রাখার।

স্থানীয়রা জানান, শীতল পাটি তৈরির মূল উপাদান (কাঁচামাল) বেতি তৈরিতে অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন। পরিশ্রমের বিপরীতে বাজার দর ভালো না হওয়ায় দিন দিন একেবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন পাটি তৈরির কারিগররা।

এদিকে হাইমচর বাজার, হাওলাদার বাজার, চরভৈরবী বাজারের মাটির তৈজসপত্র বিক্রেতারা বলেন, একটি নামাজের পাটির দাম ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। অথচ ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা খসালেই প্লাস্টিকের একটি নামাজের পাটি কেনা সম্ভব। আবার একটি বড় পাটির দাম ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। অথচ এর বিপরীতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের পাটি বা ফ্লোরম্যাট কেনা সম্ভব। তাই বাজারে শীতল পাটির কিঞ্চিৎ চাহিদা থাকলেও বিকল্প পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তা টিকছে না। 

বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুরের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা বলেন, শীতল পাটি আগে হাইমচরে স্থানীয়ভাবে তৈরি ও সরবরাহ হলেও এখন কম দামে অন্যজেলা থেকে কিনে আনা যায়। কাছাকাছি উপজেলা চাঁদপুরের কচুয়া ও শাহরাস্তিতে কিছু শীতল পাটি পাওয়া গেলেও তার দাম অনেক বেশি। তাই শীতল পাটির চাহিদা কম হওয়ায় সর্বত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার অন্যতম ঐতিহ্য বহনকারী শিল্প ‘শীতল পাটি’। সুতরাং বাজার ব্যবস্থা ঠিক হলে হাইমচরের শীতল পাটির চাহিদা আবারও বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করছি।

চাঁদপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়