ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সাড়া জাগিয়েছে ‘খৈলান পালা’

সিদ্দিক আলম দয়াল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২১, ১ জুন ২০২১   আপডেট: ২১:২৮, ১ জুন ২০২১

একসময়ে গ্রাম বাংলায় পালাগান ছিল বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। তবে আধুনিক প্রযুক্তির কাছে হারমেনে ধীরে ধীরে কদর হারিয়েছে পালাগান, যাত্রাগান, বায়োস্কোপসহ বেশ কিছু বিনোদন মাধ্যম। এখন সেগুলো ঐতিহ্য হয়ে গেছে।

‘খৈলান পালা’ নামটি অপরিচিত ঠেকলেও আসলে ততটা অপরিচিত নয়। এর ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। বলা হয়ে থাকে কুশান শিল্পীদের জীবনের সুখ-দুঃখ নিয়ে রচিত ও প্রদর্শিত হয় খৈলান পালা।

উত্তরবঙ্গের উপভাষায় ‘কুশ’ নামটি কুশান হিসেবে উচ্চারিত। কুশের গান থেকেই কুশান গানের নামকরণ হয়েছে। আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা, সংস্কৃত কুশলীব শব্দ থেকে কুশান শব্দটির উৎপত্তি।

এ ছাড়া আরও একটি জনমত প্রচলিত আছে। রামায়ণের কাহিনী থেকে জানা যায়, নির্বাসিতা সীতার গর্ভে বাল্মীকির আশ্রমে লব ও কুশ জন্মগ্রহণ করেন। বাল্মীকির শিক্ষায় লব ও কুশ রামায়ণ আয়ত্ত করেন। পরে মহর্ষির অনুমোদনক্রমে দুই ভাই রামচন্দ্রের সভায় বীণা সহযোগে রামায়ণ গান পরিবেশন করেন। রামায়ণ গান প্রচলনের ধারাবাকিতা অনুসরণ করেই কুশান গানের সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। 

সাধারণত বাড়ির উঠান, মন্দির প্রাঙ্গণ বা কোনো খোলাস্থানে উৎসব উপলক্ষে কুশান গানের আয়োজন করা হতো। এ গানের আসর বসতো সন্ধ্যার পর, চলতো ভোর পর্যন্ত। 

চরিত্রের মধ্যে একজন লব। একজন কুশ। বাকীরা প্রয়োজনে অন্যান্য ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেন। ভূমিকা যখন থাকে না, তখন বাদ্যযন্ত্র বাজান।

সম্প্রতি গাইবান্ধায় খৈলান পালা বেশ সাড়া জাগিয়েছে। প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যময় এ পালা গানকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে গাইবান্ধার সারথি থিয়েটার। 

উত্তরবঙ্গে গ্রামীণ ভাষায় উঠানকে বলা হয় খুলি। এই খুলি থেকেই খৈলান। অর্থাৎ উঠানে পরিবেশিত পালাকেই বলা হচ্ছে খৈলান পালা। তবে কুশ-লবের কাহিনির মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই খৈলান পালা। বিষয় বস্তুতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। 

সারথি থিয়েটারের পরিবেশিত খৈলান পালায় সমাজের নানা অনাচার, নারীর প্রতি সহিংসতা ও অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। মূলত সমাজের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা হচ্ছে এসব পালাগানের মাধ্যমে।

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ইতোমধ্যে ৬৯টি পালা পরিবেশন করেছে সারথি থিয়েটার। সাড়াও পাচ্ছে ভালো। এদিকে পালাগান দেখে গ্রামের মানুষও আনন্দিত। 

সারথি থিয়েটারের খৈলান পালার দলে যারা কাজ করছেন— তাদের অনেকেই ভ্যান বা রিকশা চালক, কেউবা চায়ের দোকানদার। সারাদিনের কাজকর্ম শেষ করে রাতে শুরু হয় পালাগান পরিবেশন।

মূল পেশা যাই হোক না কেনো, তারা সবাই শিল্পী। প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী একটি বিষয়কে বেছে নিয়ে তারা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। সমাজ সচেতনতা বাড়াতে তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

গাইবান্ধা/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়