ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খুলনায় বিধিনিষেধে চলছে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৬, ৯ জুন ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৫, ৯ জুন ২০২১
খুলনায় বিধিনিষেধে চলছে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা

খুলনায় হাফ সার্টার খুলে কেনাবেচা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

খুলনায় এক সপ্তাহের ওই বিধিনিষেধের আজ বুধবার (৯ জুন) ৬ষ্ঠ দিন।

কিন্তু সড়কে যানবাহন চলাচল ও মানুষের আনাগোনা দেখে বোঝার উপায় নেই যে শহরে বিধিনিষেধ চলছে।

বুধবার (৯ জুন) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের বড় বড় মার্কেট ও শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। খোলা রয়েছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে। তবে বিধিনিষেধ মানতে সবার মধ্যেই যেন চলছে এক ধরনের ‘চোর-পুলিশ’ খেলা।

জেলায় বিধিনিষেধ জারি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ দেখা দিয়েছে। মানুষের মাঝে নেই সচেতনতা। বিধিনিষেধ মানতে চলছে লুকোচুরি। দোকানপাটের বেচাকেনা চলছে অভিনব কায়দায়। অনেকে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে রয়েছেন মালিক-কর্মচারী। এসব দোকানের সাটার বন্ধ থাকলেও অভিনব পদ্ধতিতে চলছে বেচাকেনা।

আবার, কেউ কেউ সাটারের অর্ধেকটা খোলা রাখছে। প্রশাসনের কোনো গাড়ি দেখলেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি সাটার বন্ধ করে দেয়। চলে যাওয়া মাত্রই ফের সাটার খুলে দেয়। এভাবে লুকোচুরির মধ্যদিয়ে চলছে তাদের বেচাকেনা। অবশ্য অনেকেই দোকান খোলা রাখার অপরাধে জরিমানা গুনেছেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে জরিমানা আদায় করা হয়।

এদিকে, সড়কে স্বাভাবিকভাবেই চলছে যানবাহন। বিধিনিষেধ আরোপের প্রথমদিকে মানা হলেও এখন মানুষের মাঝে অনীহা দেখা দিয়েছে। ভিড় রয়েছে কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকানগুলোতে। বিশেষ করে নগরীর হেরাজ মার্কেটে। এসব স্থানে অনেকের মুখেই নেই মাস্ক।

মহানগরীর রয়েল মোড়, শান্তিধাম মোড়, পিকচার প্যালেস, ডাকবাংলা মোড়, বড়বাজার, চিত্রালীবাজার, ময়লাপোতা মোড়, নিউ মার্কেট এলাকা, শিববাড়ি, সাতরাস্তা মোড়, ফেরিঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, রেলস্টেশন এলাকা, খালিশপুর বিআইডিসি সড়ক, হাউজিং বাজার, আলমনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।

এছাড়া, শুরু থেকেই করোনাভাইরাস রোধে এবং মানুষকে সচেতন করতে মাঠে রয়েছে প্রশাসন। প্রতিদিনই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মামলা ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক জানান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান করা হয়েছে কিনা, বিকেল ৫টার আগে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান ও ওষুধের দোকান ব্যতীত অন্যান্য দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে কিনা, বিকেল ৫টার পর ওষুধের দোকান ব্যতীত সকল দোকান বন্ধ আছে কিনা, খাবারের হোটেলসমূহে ক্রেতা বসিয়ে খাবার বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হয়। আদেশ অমান্যকারীদের ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এবং ‘দণ্ডবিধি, ১৮৬০’ এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান মোতাবেক জরিমানা করা হচ্ছে।

এদিকে, খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানান, খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ ছিল। খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৯ নমুনা পরীক্ষা করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫১ জনের। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন। মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তবুও কেন যেন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছে।

খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক‌্যাল অফিসার এবং করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত খুলনা করোনা হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১২৯ জন রোগী। যার মধ্যে ৬৩ জন রেড জোনে, ২৮ জন ইয়োলো জোনে, আইসিইউতে ২০ জন এবং এইচডিইউতে ১৯ জন। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৪ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন।

প্রসঙ্গত, করোনার বিস্তার ঠেকাতে খুলনা মহানগরীর সদর, খালিশপুর, সোনাডাঙ্গা ও রূপসা উপজেলায় এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ অব্যাহত রয়েছে। ৪ জুন থেকে শুরু হওয়া এ বিধিনিষেধ চলবে ১০ জুন পর্যন্ত।

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়