ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৬ বছর ধরে শিকলবন্দি আবির

আবদুল বাশির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ১৭ জুন ২০২১   আপডেট: ২১:১৯, ১৭ জুন ২০২১
৬ বছর ধরে শিকলবন্দি আবির

শিকলবন্দি আবির

জালাল করিম ওরফে আবির। বয়স ১৬ বছর। গত ছয় বছর ধরে অন্ধকার ঘরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে তার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর রহমতপাড়া মহল্লার মাজহারুল করিমের ছোট ছেলে আবির। মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেটি বাড়ির বাইরে গেলে হারিয়ে যেতে পারে। তাই এই শিকল পরা জীবন তার। তবে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সেরে উঠতো। কিন্তু অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছে না পরিবারটি। 

আবিরের বাবা মাজাহারুল করিম বলেন, ‘‘২০১৫ সালে তার মাথার সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু রোগ ভাল হয়নি। পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করানো হয়েছে। তবে তার রোগ সারেনি।

‘২০১৯ সালে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় আবির। বহু খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনেকদিনপর আমার মেঝো ছেলে আলো ঢাকার একটি স্থানে তাকে খুঁজে পায়। তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। তবে তার কথা-বার্তা ও আচরণে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। ছেলেটির এখন চিকিৎসা দরকার। কিন্তু আমার পক্ষে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।”

মাজাহারুল করিম জানান, করোনার কারণে বর্তমানে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অর্ধাহারে-অনাহারে সংসার চলছে। বড় ও মেঝো ছেলে বাইরে কাজ করে। তারা যে টাকা-পয়সা দেয় তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই সংসার চালানোই যেখানে চরম সমস্যা, সেখানে ছেলে চিকিৎসা করাবেন কী করে?

নিজের বসতবাড়ি ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই মাজাহারুল করিমের। ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য নিতে কয়েকবার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হয়েছেন। কোনো সহযোগিতা পাননি। এছাড়া উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে সাহায্যের আবেদন জমা দেওয়া আছে। সেখান থেকেও কোনো আশ্বাস মেলেনি।

আবিরের মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমরা নিরুপায়। চক্ষু লজ্জার ভয়ে প্রকাশ্যে কারও কাছে হাত পাততে পারি না। গোপনে অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছি। কেউ সাড়া দেয়নি। বসতভিটা ছাড়া সম্পদ বলতে তাদের আর কিছুই নেই আমাদের। স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ছেলেরা তেমন খরচ বহন করতে পারছে না। ছোট ছেলে আবির দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। অর্থসংকটে তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি বা সরকার সহায়তা করতো, তাহলে ছেলেটা নতুন জীবন ফিরে পেতো।’

প্রতিবেশী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আবিরের মানসিক সমস্যা। মাঝে মাঝে ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে সে। সেসময় তার আচরণে বাবা-মাসহ প্রতিবেশীরাও ভড়কে যায়। তবে সঠিক চিকিৎসা পেলে ছেলেটি নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে।’

ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম সিরাজ বলেন, ‘ছেলেটি অনেকদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছে। তার পরিবার কখনও সহযোগিতার জন্য আমাকে বলেনি। তাদেরকে যথাসম্ভব সহযোগীতা করা হবে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে চিঠি এলে তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

গোমস্তাপুর/চাঁপাইনবাবগঞ্জ/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়