ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১০ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ দুর্গন্ধে নাকাল 

আবদুর রহমান, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ২২ জুন ২০২১   আপডেট: ১৯:২৭, ২২ জুন ২০২১
১০ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ দুর্গন্ধে নাকাল 

এই ভয়াবহ দুর্গন্ধ থেকে কোনোভাবেই নিষ্কৃতি মেলে না আমাদের। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আমাদের এলাকায় ময়লা ফেলে ময়লার পাহাড় বানিয়েছে। এই ময়লার কারণে এলাকার মানুষ প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’ 

এভাবে কষ্ট ব্যক্ত করছিলেন কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ঝাকুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাসেম। এই দুর্ভোগ শুধু আবুল কাসেমের একার নয়, আশপাশের কমপক্ষে ১০টি গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ বছরের পর বছর ধরে এই দুর্ভোগের শিকার। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর-ঝাকুনিপাড়া গ্রামে। এ সব ময়লা-আবর্জনা ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির আশপাশে ও সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় নাক চেপে ওই এলাকা পার হতে হয় পথচারীদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্জ্য ফেলার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে আদর্শ সদর উপজেলার ঝাকুনিপাড়া গ্রামে ১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। ২০১১ সালে কুমিল্লা পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। এরপর সীমানা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে জনসংখ্যাও। ফলে ময়লা-আবর্জনার পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। এতে দিন যতই গেছে, ততই অতিরিক্ত ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অসহনীয় হয়ে উঠছে ওই এলাকার মানুষের বসবাস। বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ১২০ মেট্টিক টন বর্জ্য এখানে ফেলা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফেলা হয় এখানে। 

এতে ঝাকুনিপাড়া, দৌলতপুর, বাজগড্ডা, খামারকৃষ্ণপুর, সুয়ারা, জগন্নাথপুর, সংরাইশ, মৌলভীপাড়া, নবগ্রাম, বালুতুপা, অরন্যপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ময়লার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ময়লা ফেলার জায়গার তিন দিকে আংশিক সীমানাপ্রাচীর থাকলেও উত্তর দিকে খোলা। এ ছাড়া ময়লার স্তূপের উত্তর পাশ দিয়ে বিবিরবাজার স্থলবন্দর সড়ক। ফলে এই এলাকার মানুষকে নিত্যদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ময়লা ফেলছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। সড়কের পাশেও ময়লা ফেলা হচ্ছে। মূল প্রবেশ মুখেও রয়েছে আবর্জনার বিশাল স্তূপ। আর ভিতরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ময়লা ফেলার স্থানে অবাধে গরু-ছাগল ঢুকে পড়ছে। এসব ময়লার স্তূপ থেকে উচ্ছিষ্ট খাচ্ছে গরু-ছাগল। ময়লা ফেলার জায়গার সীমানা প্রাচীর এবং দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বাতাসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এ সব ময়লা এখন আমাদের জন্য ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ময়লার দুর্গন্ধের কারণে এই এলাকায় নতুন করে কেউ আত্মীয়তাও করতে চান না। এলাকার মানুষ বারবার প্রতিবাদ জানালেও সিটি করপোরেশন এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়নি। দিন যত গেছে, দুর্ভোগও তত বেড়েছে।’

ঝাকুনিপাড়া গ্রামের মনির হোসেন বলেন, ‘ময়লার কারণে এখন বাড়িতে থাকাই দায়। সিটি করপোরেশন আমাদের এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।’

একই গ্রামের বৃদ্ধ সফি উল্লা বলেন, ‘ময়লার দুর্গদ্ধ এক মাইল দূর থেকেও পাওয়া যায়। বিশেষ করে চলমান বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির মাধ্যমে এসব ময়লা-আবর্জনা আশপাশের জলাশয় ও রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে, এত কিছুর পরও সিটি করপোরেশন এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘বায়ু দূষণের কারণে এলাকার মানুষের বমি হয়। এ ছাড়া পেটের পীড়া, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগসহ নানা রোগে ভুগছে অনেকে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ময়লা ফেলার কারণে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, ‘আমি প্রতিটি মিটিংয়ে সিটি করপোরেশনকে এই ব্যাপারে বলেছি। এ ছাড়া এ ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদনও দিয়েছি। সিটি করপোরেশন বলেছে, তারা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে এই বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু নিজেও। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমরা অনেক আগ থেকে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে ২১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে এসব বর্জ্য রি-সাইকেলিং করে কাজে লাগানো হবে।’ মেযর আশা করেন, শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।

/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়