তৃতীয় দিনে টাঙ্গাইলের দুই পৌরসভার লকডাউন ঢিলেঢালা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইল ও এলেঙ্গা পৌর এলাকায় তৃতীয় দিনের লকডাউন চলছে। গত মঙ্গলবার (২২ জুন) থেকে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে জেলা প্রশাসন।
দেখা যায়, টাঙ্গাইলে গত দুই দিনের চেয়েও বেশি রিকশা, মোটরসাইকেল, পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক অনেক বেশি চলাচল করছে। টাঙ্গাইল ও এলেঙ্গা দুই পৌর এলাকায় লকডাউন চলছে ঢিলেঢালাভাবে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিকে কেউ এক সাটার আবার অনেকেই অর্ধেক সাটার খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে কেনাকাটা।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বটতলা, ডিস্ট্রিক্ট গেট, কুমুদিনী কলেজ গেট, নতুন বাসস্ট্যান্ড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, ভিক্টোরিয়া রোড, নিরালার মোড়, শান্তিকুঞ্জ মোড়, বেবীস্ট্যান্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ নিয়ে কারও কোনো ভাবনা নেই। মিষ্টির দোকান, খাবার হোটেল, মার্কেট, চা ও মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। সাধারণ মানুষও ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই। অনেকে বাইরে বের হয়েছেন দৈনন্দিন কাজে। অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।
একই চিত্র এলেঙ্গা পৌর এলাকায়ও।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক বেলাল মিয়া বলেন, গত দুই দিন বের হইনি। তবে জানতে পেরেছি গত দুই দিন টাঙ্গাইল অনেকেই রিকশা চালিয়েছে। তাই আমিও আজ বের হয়েছি। সামনে ঈদ আসছে তাই ঝুঁকি নিয়েই বের হতে হয়েছে।
পথচারি জুবায়ের মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে তো আর করোনা নেই, তাই শহরে মাস্ক ছাড়াই এসেছি। পুলিশ এখনও দেখেনি, আর পুলিশের সামনে দিয়ে আমি যাবও না।’
ব্যবসায়ী সোনা মিয়া বলেন, ‘ঈদের আগেই শুধু লকডাউন দেয়। গত দুই বছর যাবত ঈদে কোন ব্যবসা করতে পারি না। এক সাটার খুলে দোকান চালাচ্ছি। ম্যাজিস্ট্রেট আসলে বন্ধ করে দিবো।
এ দিকে টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৪৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৮০ জন, কালিহাতীতে ২৩ জন, ঘাটাইলে ১৫ জন, মির্জাপুরে ১৪ জন, ভুঞাপুরে ১২ জন, মধুপুরে ৯ জন ও দেলদুয়ারে ৯ জন, বাসাইলে ৫ জন ও গোপালপুরে ৫ জন ও সখীপুরে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৭১৯ জন। নতুন করে মারা গেছেন ১ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ১০৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৪৩৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৯৬ জন।
করোনা সংক্রমণ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গত রোববার সভা করে এই কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে টাঙ্গাইল ও এলেঙ্গা পৌর এলাকায় পুলিশ ১৮টি চেকপোস্ট স্থাপন করেছে। গত ১১ দিন ধরে জেলায় সংক্রমনের হার ৩২ শতাংশের উপরে রয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন বলেন, টাঙ্গাইল শহরে লকডাউন বাস্তবায়নে ১৩টি চেকপোস্ট ও ৫টি মোবাইল টিম কাজ করছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় গত দুই দিনে ১২টি মামলা করা হয়েছে। আজো ভ্রাম্যমাণ আদালত চলমান রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাব উদ্দিন খান জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক দূরত্ব ও সরকারি নির্দেশনা মেনে মাস্ক ব্যবহার করলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
আবু কাওছার/টিপু
আরো পড়ুন