ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শখের খামারে কোটি টাকার স্বপ্ন  

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ২৫ জুন ২০২১   আপডেট: ১৭:৩১, ২৫ জুন ২০২১

মাত্র ২০টি গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন মো. এরশাদ উদ্দিন। এক বছরের ব্যবধানে তার খামারে এখন গরু, মহিষের সংখ্যা ২৫০। এর মধ্যে ১২০টি গরু তিনি প্রস্তুত করেছেন কোরবানি ঈদের জন্য। এ জন্য বেছে নিয়েছেন অর্গানিক পদ্ধতি। এই ঈদে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যবসার আশা করছেন এই খামারি। পাশাপাশি অচিরেই খামারের পরিধি বাড়িয়ে প্রায় এক হাজার গরু, মহিষ পালনের স্বপ্নের কথাও জানান তিনি।

গত বছর মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাবে ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিলে এরশাদ গ্রামে ফিরে আসেন। বসে না-থেকে জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার রৌহাগ্রামে শুরু করেন পশুপালন। শখের বসে শুরু করলেও খামারের সাফল্য দেখে তার উৎসাহ বেড়ে যায়। বর্তমানে ১৬ হাজার বর্গফুটের টিনশেডের খামারটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়েছে। তিনি এর নাম রেখেছেন ‘জেসি এগ্রো’। খামারে বর্তমানে বিদেশি কয়েকটি গাভী রয়েছে। প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৬০ লিটার দুধ। পাশাপাশি কোরবানির জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পশুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অর্গানিক পদ্ধতিতে গরু-মহিষ মোটাতাজা করণের পরিকল্পনা নেন তিনি।

এরশাদের সেই পরিকল্পনা আজ প্রায় সফল। এলাকায় তো বটেই আশপাশের উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে তার অর্গানিক পদ্ধতিতে পশুপালনের কথা। ফলে প্রতিদিনই কোরবানির পশু কিনতে ক্রেতা আসছেন। অনেকে গরু পছন্দ করে বুকিং দিয়ে যাচ্ছেন। তেমনই একজন মো. রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এই খামারের কথা শুনেছি। ঘুরে দেখলাম এখানে ভুট্টা দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি প্রাকৃতিক খাবার পশুকে খাওয়ানো হয়। এতে কিন্তু লালন-পালনের খরচ কমে, আবার মাংসও স্বাস্থ্যসম্মত হয়।’

বর্তমানে খামারে দেশি-বিদেশি জাতের ১৫০টি ষাঁড়, ৪০টি মহিষ এবং ৬০টি গাভী রয়েছে। সবচেয়ে বড় ৯০০ কেজি ওজনের ষাঁড়ের নাম ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। সবচেয়ে কম ওজনের গরুটির ওজন প্রায় ৪০০ কেজি। এগুলো ছয়মাস থেকে এক বছর ধরে খুব যত্ন নিয়ে পালন করা হচ্ছে।

খামারে পশুর খাবারের সার্বিক তত্বাবধানে থাকা মো. সাইদ আল সাহাবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ জন শ্রমিক খামারে নিয়মিত কাজ করেন। এর মধ্যে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেয়া কর্মী রয়েছেন। তিনি নিজেও এ কাজে প্রশিক্ষিত।

খামারের উদ্যোক্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার গরুপালনে প্রতি দুর্বলতা ছিল। বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ ও স্টেরোয়েডের মাধ্যমে গরু মোটাতাজাকরণ ভুল প্রমাণ করতেই আমি পশুখাদ্য নিজে উৎপাদন করছি। কুড়া, ভুষি, ভুট্টা, খড়, খইল, চিড়া, গুড় এবং ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট নিয়মিত দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত জিংক, কৃমিনাশক, লিভার টনিক ও বিভিন্ন রোগের ওষুধও দিচ্ছি।’

কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সুস্থ ও ভেজালমুক্ত গরু সরবরাহ করা মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে এরশাদ আরো বলেন, ‘ঈদে চার কোটি টাকার গরু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ক্রেতারা আসছেন। খামারে গরু দেখছেন। পছন্দের গরু বুকিং দিয়ে রাখছেন অনেকে। ফোন কিংবা অনলাইনেও কথা হচ্ছে অনেকের সঙ্গে।’ গরু বিক্রির জন্য হাটে যেতে হবে না বলেও জানান এই তরুণ উদ্যোক্তা।   

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অর্গানিক পদ্ধতিতে দেশিয় শঙ্করজাতের গরু-মহিষ পালন লাভজনক। পাশাপাশি এগুলোর মাংস মানুষের জন্য নিরাপদ। স্থানীয় মানুষ এরশাদের খামার দেখে উৎসাহিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন- তারাও এমন খামার দিতে চান। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।’

এলাকায় আগে ভুট্টাচাষ তেমন হতো না। এরশাদের খামারের কারণে স্থানীয় কৃষক ভুট্টাচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে খামারটি- জানান নজরুল ইসলাম।  
 

/তারা/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়