ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শয্যা বাড়িয়েও কাটছে না সংকট, হাসপাতালের ফ্লোরই শেষ ভরসা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ৪ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৩:২০, ৪ জুলাই ২০২১
শয্যা বাড়িয়েও কাটছে না সংকট, হাসপাতালের ফ্লোরই শেষ ভরসা

খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মাত্র ১শ’ শয্যা নিয়ে করোনা চিকিৎসার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু স্বল্প দিনের ব্যবধানে এখন শয্যা সংখ্যা ৪৩৫।

একটির জায়গায় যুক্ত হয়েছে তিনটি সরকারি এবং বেসরকারি একটি হাসপাতালও। এরপরও কাটছে না বেড সংকট। ফলে নূ‌্যনতম চিকিৎসা পেতে রোগীদের কাছে এখন যেন ফ্লোরই হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসা।

অপরদিকে, খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজের (খুমেক) করোনা পরীক্ষার আরটি পিসিআর ল্যাবে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় সেটিও বন্ধ রয়েছে। বিকল্প হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে যৎ সামান্য নমুনা পরীক্ষা হলেও নতুন আক্রান্তদের পরীক্ষার সুযোগ নেই।

কারণ: খুবিতে শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি থাকা পজিটিভ রোগীদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে করে নতুন আক্রান্তরা এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমে ১শ’ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিট। দ্বিতীয় দফায় আরও ৩০টি এবং তৃতীয় দফায় আরও ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২শ’ শয্যায় উন্নতিকরণ করা হয়। কিন্তু বেড সংকট কাটছেই না। এখানে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। এরা হাসপাতালের ফ্লোরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অপরদিকে, খুলনা জেনারেল (সদর) হাসপাতালের চিত্রও একই। এখানে ৭০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর এক সপ্তাহের মধ্যেই দেখা দিয়েছে বেড সংকট। সব বেডই রোগীতে পূর্ণ হয়ে আছে।

কর্তৃপক্ষ বলছেন, যে পরিমাণ রোগী এই মুহূর্তে আসছে, তাতে বেড দ্বিগুণ বাড়ানো হলেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গত বছরে দৈনিক ১০-১৫ সংক্রমণ নিয়ে রোগী এলে, এবার গড়ে সেই সংখ্যাটা ৫০-৭৪ জন পৌঁছাছে।

এদিকে, বেড সংকট কাটাতে শনিবার (০৩ জুলাই) থেকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ শয্যা নিয়ে করোনা ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছে। এখানে প্রথম দিনে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ৮ ঘণ্টায় ১৭ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি হয় ৪ জন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পঞ্চাশোর্ধ এক রোগী ৩ দিন আগে খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল দিয়েছিলেন। কিন্তু পিসিআর মেশিনে সমস্যা থাকার কারণে পরীক্ষার ফলাফল পাননি। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না তিনি। কিন্তু শারীরীক অসুস্থতা ক্রমেই বাড়তে থাকায় চলতেও পারছেন না। শেষ ভরসা হিসেবে নতুন চালু হওয়া আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির আশায় বারান্দার মেঝেতে শুয়ে মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার সঙ্গে থাকা স্বজন বলেন, ‘একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতালে দৌঁড়াদৌড়ি করছি। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়ায় কেউই ভর্তি করছে না। আমরা এখন কি করবো’- এ প্রশ্নও করেন তিনি।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়োজ মোহাম্মদ বেড সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মে-জুন মাস থেকেই ক্রমেই করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোগীর চাপ সামলাতে খুমেক হাসপাতালে প্রথমে ১০০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ১৩০ শয্যা উন্নীত করা হয়। তাতেও রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে সদর হাসপাতালকে ৭০ শয্যা করোনা ইউনিট চালু করা হয়। সেখানেও এক সপ্তাহের মধ্যে রোগীর সবকয়টি সিট পূরণ হয়ে যায়। এরপরে খুমেক হাসপাতালে আরও ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু ওই হাসপাতালে ফ্লোরে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। তাতেও রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে সর্বশেষ শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত ৪৫ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। সেখানেও রোগীর চাপ। এ অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে খুমেকে আরও ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যা করা হয়েছে। কিন্তু চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়