ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

কারাবন্দিকে নির্যাতন: ৫ কারারক্ষী বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

আবদুর রহমান, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ৪ জুলাই ২০২১  
কারাবন্দিকে নির্যাতন: ৫ কারারক্ষী বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দিকে নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকৃত ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কারাগারের ভেতরে শাহজাহান বিলাশ নামের এক বন্দিকে পিঠমোড়া করে বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা জানাজানি হয় শনিবার (৩ জুলাই)।

৫ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মেঝেতে ওই বন্দিকে পেটানো হচ্ছে। তাকে ঘিরে রয়েছেন কয়েকজন কারারক্ষী।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) পাঁচজনকে বরখাস্ত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে বন্দি পেটানোর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন সহকারী প্রধান কারারক্ষী শাহনেয়াজ আহমেদ ও কারারক্ষী দিদারুল ইসলাম। আর ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বাইরে পাঠানোর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম, অনন্ত চন্দ্র দাশ এবং চরণ চন্দ্র পাল।

কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা শুনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাশ। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সহকর্মীরা।

কারা সূত্র জানায়, ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের দুর্গাপুর গ্রামের আবদু মিয়ার ছেলে শাহজাহান বিলাশ (কয়েদি নম্বর ৭১৫১/এ) ডাকাতি ও হত্যা মামলার ৫৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। গত ২৬ বছর ধরে তিনি কুমিল্লা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ১২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজা, নগদ ৬০০ টাকাসহ কারারক্ষীর হাতে ধরা পড়েন। এরপর তাকে কারা অভ্যন্তরে কেস টেবিলের সামনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বন্দি শাহজাহানের দুই হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে মাটিতে ফেলে তাকে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বন্দি নির্যাতনের বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। পরে তাদের নির্দেশে এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খানকে। সদস্য দুইজন হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের জেল সুপার ইকবাল হোসেন ও ফেনী জেলা কারাগারের জেলার শাহাদত হোসেন মিঠু।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মো. আসাদুর রহমান বলেন, আসলে ওই বন্দিকে সেইভাবে বেধড়ক পেটানো হয়নি। গত ১৬ এপ্রিল ওই বন্দির কক্ষ তল্লাশি করে মাদক পাওয়া যায়। পরদিন ১৭ এপ্রিল তাকে আলাদা সেলে পাঠানো হয়। সেল পরিদর্শনে গেলে শাহজাহান বলেন- তিনি আর সেলে থাকতে পারবেন না। তাকে অন্য বন্দি ও কয়েদিদের মতো করে রাখতে হবে। এরপর গত ১২ মে কেস টেবিলে তাকে আনলে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন।  

জেল সুপার আরও বলেন, ‘ওই সময় উপস্থিত ছিলেন আমাদের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ। উনার সামনে ওই বন্দি নিজের মাথা লোহার দরজায় আঘাত করেন। তাকে যতই নিবৃত্ত করতে যাই, তিনি ততই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকেন। পরে তাকে রক্ষীরা লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।’ এতে তার কোনো সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেন জেল সুপার মো. আসাদুর রহমান।

বন্দি পেটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক বছর আগে আমি কুমিল্লায় যোগদানের পর কারাগারে মাদক সেবনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। সেই সময় সহকারী প্রধান কারারক্ষী তরিকুল ইসলামকে ৫২২ পিস ইয়াবাসহ আটক করি। বর্তমানে তিনি জেলে আছেন। বর্তমানে তরিকুলসহ আরও কয়েকজন মিলে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ‘আপনারা ভিডিওতে দেখবেন ওইভাবে তাকে পেটানো হয়নি। আমরা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিলাম মাত্র। এর বেশি কিছু না। এছাড়াও যে দুইজন ওই বন্দিকে পিটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

বন্দি পেটানোর ঘটনা সামনে আনায় তিন কারারক্ষীকে কেন বরখাস্ত করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র জেল সুপার বলেন, ‘ওই তিনজন আগে মাদক সংশ্লিষ্টতায় যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের সঙ্গে যোগসাজশে সিসিটিভির ফুটেজ বাহিরে পাঠিয়েছেন। এটা স্পষ্টতই জেলকোডের বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়