ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা পরীক্ষা করতে না পেরে রোগী ফিরে যাচ্ছে

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২০:০১, ৫ জুলাই ২০২১
ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা পরীক্ষা করতে না পেরে রোগী ফিরে যাচ্ছে

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রতিদিনি ভিড় করছে শত শত রোগী। যাদের মধ্যে সিংহভাগই করোনা উপসর্গের। তারা করোনা পরীক্ষা করানোর জন্যে আসলেও তাদের অধিকাংশই তা করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে দিনে ৬০ থেকে ৮০ জন রোগীর করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা সম্ভব। এতে করে প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে পরীক্ষা ছাড়াই ফিরে যেতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সংকটের কারণে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে তাদের। 

সোমবার (০৫ জুলাই) দুপুরে করোনা পরীক্ষা করতে এসে ফিরে যেতে দেখা যায় শহরের জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনকে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সকাল ১১টার এসেছি। আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টোকেন নিয়েছি। এরপর ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করতে আসি। এখন তারা কাল আসতে বলছেন।’ 

তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ী তারেক বলেন, ‘কাল এসে ফিরে গেছি।  আজও ফিরে যেতে হচ্ছে। পরীক্ষা করতে আসতেই আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আর সম্ভব না। যাই হবে হোক। আমি আর পরীক্ষা করাতে আসবো না।’  

দেশের উত্তর সীমান্তের এ জেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সেই সেই অনুযায়ী বাড়ছে করোনা পরীক্ষার চাপ। যা সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এপ্রিল-মে মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জুন মাসে বেড়েছে ১৫ গুণ। 

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৬৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৭৭ জন। আর শুরু থেকে মৃত্যুর ৯৫ জনের মধ্যে জুন মাসে মারা গেছেন ৪৭ জন। করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু—এ দুই সূচকে জুন মাস করোনা পরিস্থিতির ১৪ মাসকে ছাড়িয়ে গেছে।

জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় গবেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল লতিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা পরীক্ষা না করে এভাবে যদি রোগীদের ফেরত দেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা পরীক্ষার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে। এমনটা হলে এই জেলার জন্যে অনেক ভয়ংকর সময় অপেক্ষা করছে। 

তাই দ্রুতই কোনো উপায় বের করে শতভাগ রোগীর করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিৎ বলেও তিনি মনে করেন।  

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাজিরুল ইসলাম চপল জানান, জেলায় দিন দিন করোনা রোগী বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে জনবল বাড়ানো সম্ভব হয়নি। সদর হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। সেই কারণে বেশি সংখ্যায় করোনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। 

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, ‘প্যাথলজি, এন্টিজেন পরীক্ষা, সেম্পল নেওয়া, সিরিয়াল নেওয়ার জন্য এই বিভাগে ২৪ ঘণ্টার জন্যে আমাদের কর্মকর্তা রয়েছে মাত্র ৬ জন। করোনা পরীক্ষা ছাড়াও হাসপাতালের বাকি সব পরীক্ষা এই জনবলে করাতে হচ্ছে। তাই পরীক্ষা করাতে আসা রোগীদের মধ্যে থেকে ৬০ জন, আর ভর্তি থাকা রোগীদের মাঝে থেকে ২০ জনের মতো সেম্পল নিয়ে পরীক্ষা করছি। বাকিদের পরবর্তী দিনে আসতে বলা হচ্ছে। রোগীদের পরীক্ষা ছাড়াই ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিতে আমরাও চিন্তিত। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণভাবে উপায়হীন।’ 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়