ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লাভের আশা করছেন ৪৫ গরুর খামারি রশিদ মৃধা

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৬:০০, ৮ জুলাই ২০২১

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবারা লঞ্চ ঘাট এলাকার খামারি মো. রশিদ মৃধা (৩০)। তিনি কোরবানির ঈদকে সমানে রেখে এবার নিজস্ব খামারে প্রায় অর্ধশত গুরু লালন-পালন করছেন। এবার ঈদে গরু বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা করছেন। কিন্তু কানোরাভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় ঈদের আগেই গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, সেই চিন্তা ঘিরে ধরেছে তাকে। তবে, কোরবানির যেহেতু এখনো অনেকটা সময় বাকী, হাল ছাড়েননি, অপেক্ষা করছেন সুসময়ের।    

রশিদ মৃধা বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একবছর আগে থেকে নিজস্ব খামারে ৪৫টি গরু লালন পালন করছি। বিক্রি করে লাভবান হবো, সেই স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় জেলায় পশুর হাট বসবে কিনা, তা এখনো জানি না। আর অনলাইনে কীভাবে বিক্রি করবো, তাও বুঝতে পারছি না। এই গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে লোকসান হবে। আর আমার মতো এমন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে জেলার অন্তত ৪ হাজার খামারির।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানির ঈদে গোপালগঞ্জ জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৯ হাজার। লাভের আশায় খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ৩২ হাজার গবাদি পালন করা হয়েছে। এখানে জেলার চাহিদার তুলনায় প্রায় তিন হাজার বেশি। তবে, এবছর হাট না বসলেও খামারিদের পশুর ছবি, দাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইন ৫টি প্ল্যাটফর্মে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। 

সদর উপজেলার গোবারা লঞ্চ ঘাট এলাকায় দেখা গেছে, মো. রশিদ মৃধা তার খামারে ৪৫টি গরু প্রতিপালন করেছেন। ছোট গরু কিনে ৮/১০ মাস পালন করে খড় ও ভূষির সঙ্গে ঘাস খাইয়ে ক্ষতিকর কোনো রকম ওষুধ ব্যবহার না করেই এসব গরু মোটাতাজা করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ও দাদন নিয়ে এসব পশু পালন করেছে তিনি। করোনার প্রভাবে দফায় দফায় পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে দ্বিগুন। তার খামারে থাকা এসব গরু সর্বোচ্চ ১ লাখ ১০ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৬০ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব গুরু বিক্রি করতে না পারলে তাকে দিতে হবে লোকসান।

এদিকে কোরবানির পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। খামারিদের সঙ্গে ক্রেতাদের যোগাযোগ না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন তারা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অনলাইনের মাধ্যমে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করলেও অনেক খামারি বিষয়টি জানেনই না। সেইসঙ্গে ভারতীয় গরু দেশে আসলে লোকসান গুনতে হবে এমনই শঙ্কায় রয়েছেন তারা। 

খামারি সাহেব আলী ফকির (৫০) ও নিজামুল বিশ্বাস (১৯) বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে এবার গরু লালন-পালন করেছি। কিন্তু বিক্রি করতে পারবো কিনা সেই চিন্তায় রয়েছি আমরা। এবার হাট না বসলে খামারের গরু খামারেই রয়ে যাবে। এতে লোকসানগুনতে হবে আমাদের। অনলাইনেও কিভাবে বিক্রি করবো, সে বিষয়টিও আমরা জানি না। তবে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে না পারলে আমাদের মাথায় হাত পড়বে।

খামারি মিনহাজ মৃধা (২০) বলেন, একদিকে করোনা, অন্যদিকে হাট না বসার আশঙ্কা। সেইসঙ্গে ভারতীয় গরু আসা নিয়েও চিন্তায় রয়েছি। যদি ভারতীয় গরু আমাদের জেলায় চলে আসে, তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আজিজ আল মামুন বলেন, ‌‘করোনাভাইরাসের কারণে এবার হাট বসানো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খামারিদের পশুর ছবি, দাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইনের ৫টি প্লাটফর্মে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ ঈদের আগ মুহূর্তে হাট বসলে এবং আনলাইনে পশু বিক্রি করার পাশাপাশি ভারতীয় পশু না আসলে খামারিরা লাভবান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গোপালগঞ্জ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়