ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

লাশ কাঁধে কাদা-জলে ২ কি.মি. পাড়ি দিয়ে দাফন!

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৪, ৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২২:৩৮, ৭ জুলাই ২০২১
লাশ কাঁধে কাদা-জলে ২ কি.মি. পাড়ি দিয়ে দাফন!

কাঁধে করোনায় মারা যাওয়া লাশ। গায়ে সাদা পিপিই। হাওর পাড়ি দিয়ে যেতে হবে দূরের কবরস্থানে। হাওরের মধ্য দিয়ে যাওয়া ছাড়া নেই কোনো রাস্তা। ধানক্ষেতের জমিতে হালচাষ করায় সেখানে হাঁটুপানি। লাশের খাটিয়া হাতে নিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে এভাবেই।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বিরাইমাবাদ এলাকার শেখ শফিকুর রহমান তালুকদার। তার লাশ দাফন ও কাফনের দায়িত্ব নেয় শেখ বোরহান উদ্দিন রহঃ ইসলামী সোসাইটি (বিআইএস)।

মুষলধারে বৃষ্টিতে হাঁটু পানি ও কাদায় এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন/সৎকার করে  এই টিম এর সদস্যরা। জানাযার নামাজে সীমিত সংখ্যক স্থানীয় মানুষ ও আত্মীয় স্বজন উপস্থিত হলেও কবরস্থানের পাশে নেই তেমন কেউ।

বিআইএসের চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব জানান, শেখ শফিকুর রহমান তালুকদার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ আব্দুর রউফ তালুকদার যোগাযোগ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই দাফন কাফনের জন্য টিম প্রস্তুত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টার থেকে লাশ গ্রহণ করে মরহুমের নিজ বাড়ি একাটুনা ইউনিয়নের বিরাইমাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেলা ৩টা ৩০মিনিটে জানাযার নামাজ হয়। সবশেষে কাওয়াদিঘী হাওড়ে তাদের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন কাফনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

দাফনে অংশ নেন শেখ বোরহান উদ্দীন রহঃ ইসলামী সোসাইটি বিআইএস মৌলভীবাজারের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব, দাফন কাফন ও সৎকার টিমের টিম লিডার আশরাফুল খাঁন রুহেল, সাংগঠনিক সচিব সোহান হোসাইন হেলাল, দপ্তর সচিব সিরাজুল হাসান, অক্সিজেন সার্ভিসের জেলার টিম লিডার মোঃ সোহানুর রহমান সোহান, টিম মেম্বার সিরাজুল ইসলাম, কামরান আহমদ চৌধুরী, তিতুমীর আহমেদ, শিপন আহমেদ, কামরুল ইসলাম তপু প্রমুখ।

স্বেচ্ছাসেবক হাসান আহমদ বলেন, আজকে করোনায় আক্রান্ত একজন মৃত ব্যক্তির দাফনে যে পরিশ্রম হয়েছে, এর আগে কোনদিন আমাদের এত কষ্ট করতে হয়নি। সারাদিন অঝোরে বৃষ্টি তার উপর কবরস্থানে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় প্রায় ২ কিঃমি কাদামাটি পেরিয়ে  কাউয়াদিঘির হাওরে নিয়ে লাশ দাফন করতে হয়েছে।

শেখ বোরহান উদ্দিন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, আমরা এপর্যন্ত ২৫টি দাফন কাফন ও সৎকার করেছি। আমরা একেকটি দাফনে গিয়ে একেক রকমের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। অনেকে এসে জানাজা পড়ছেন কিন্তু লাশ কিংবা কবরের পাশে কেউ আসছেন না। আমাদের টিমের দৃঢ় মনোবল আছে, যতই ক্লান্তি আসুক আমরা আমাদের এই মানবিক কাজ অব্যাহত রাখবো।

সাইফুল্লাহ/এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়