খাদ্যের অভাবে বানর লোকালয়ে
নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
নরসিংদীতে খাদ্যের অভাবে হাজারো বানর এখন লোকালয়ে। এরা দলবেঁধে হানা দিচ্ছে গ্রামবাসীর ফসল ক্ষেতে ও পথচারীদের ওপর। উপদ্রবে অতিষ্ঠ হলেও খিদিরপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামবাসি আগলে রেখেছেন এদের ।
মনোহরদীর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লী রামপুর গ্রাম। এ গ্রামের ঝোপ-জঙ্গলে মানুষের পাশাপাশি প্রায় দেড়শ বছর ধরে কয়েক হাজারেরও বেশি বানর বাস করছে ।
গ্রামে যাওয়ার পথে রামপুর বাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ে ঘরের চালে, গাছের নিচে কিংবা গাছের ওপরে বসে থাকা এ সব বানর।
পথচারীরা কেউ কিছু দিলেই দলবেঁধে এসে খেতে শুরু করে। করোনায় মানুষের আসা যাওয়া কম হওয়াতে দেখা দিয়েছে এ বানর গুলোর খাদ্য সংকট। তাই খাবারের জন্যে ঝোপ-জঙ্গল ছেড়ে এলাকার লোকালয়ে প্রায়ই উপদ্রব করছে।
এলাকাবাসি বলছেন, দিন দিন বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় ও খাবার না পেয়ে বানরগুলো লোকালয়ে এ উপদ্রব করছে। তবে এখানকার বানরগুলোর সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সম্পর্ক যে কতটা নিবিড় তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। মাঝে মধ্যে স্থানীয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতেও দেখা যায় বানরদের। তবে এদের সঙ্গে দুষ্টুমি করলে কোনো ছাড় দেয় না।
কথিত আছে, প্রায় দেড়শ বছর আগে এখানকার ভূমি অফিসের এক তহশিলদার একটি পুরুষ বানর পুষতেন। বদলি হয়ে তিনি চলে গেলেও রেখে যান বানরটি। পরে অপর এক তহশিলদার আরেকটি স্ত্রী বানর এনে দুটিকেই জঙ্গলে ছেড়ে দেন। সেই থেকে বাড়তে থাকে বানরের সংখ্যা।
রামপুর গ্রামের শান্ত বণিক জানান, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা রামপুরে প্রাচীনকাল থেকেই বানরের বসবাস। তারা এখানের বনজঙ্গলের প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেঁচে আছে। বানর গুলো স্থানীয়দের বাগানের আম,কাঁঠাল, লিচু, ফলমূল, আখ, কলা ও শাকসবজি খেয়ে ফেলছে। পান না খেলেও কিন্তু পানের বরজে ঢুকে শলা ভেঙে ক্ষতিসাধন করছে। কেউ বানরকে মারতে গেলে জোটবদ্ধ হয়ে তারা গাছের ডালপালা নিয়ে তেড়ে আসে। এমনকি ঘরে প্রবেশ করে মালপত্র নিয়ে যায়। এতো অত্যাচার সহ্য করেও এলাকাবাসী আগলে রেখেছেন প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক এসব বানর।
রামপুর গ্রামের তৈয়ব মিয়া জানান, স্থানীয় সিদ্ধেশ্বরী মন্দির মাঠে বানর প্রায়ই মনের আনন্দে খেলা করে। বানরের খেলা দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করতেন রামপুর গ্রামে। কেউ মুড়ি, কেক, বিস্কুট, কলাসহ বিভিন্ন খাবার দিলে বানরের দল ভেংচি কেটে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। আবার অল্প সময়ের মধ্যে দর্শনার্থীদের সঙ্গে বানরগুলোর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। পরে দর্শনার্থীদের ছুড়ে দেওয়া খাবার গ্রহণ করে তারা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এ রামপুরে আগের মতো মানুষ বানর দেখতে কেউ আসে না। তাই এ সময়ে খাদ্য সংকটে পড়েছে বানরগুলো।
রামপুর বাজারের মুদি দোকানদার পরশ মিয়া জানান, করোনার এই দেড় বছর সময়কালে রামপুরা এলাকার বানরগুলো চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। যার ফলে এলাকাবাসীর অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মাঝে মধ্যে বাড়ী-ঘর, দোকানপাটে ঢুকে সব কিছু তছনছ করে যা পাচ্ছেন তাই খেয়ে ফেলছেন। এ বানরের জন্যে ঠিক মতো দোকানদারিও করতে পারছি না।
রামপুর গ্রামের জোসনা বেগম নামে এক গৃহিণী জানান, বানরগুলো জন্য ঘরে মধ্যে ভাত তরকারি রাখতে পারিনা। খাদ্যের অভাবে এগুলো যখন তখন ঘরের মধ্যে ঢুকে হাড়িপাতিল উল্টিয়ে সবকিছু খেয়ে ফেলে। মাঝে মধ্যে ঘর থেকে হাড়ি পাতিল নিয়ে যায়। ঘরের বেড়া তছনছ করে। আবার যদি তাদের কোন কিছু করতে যায়, তাহলে দলবেঁধে প্রতিহত করতে আসে।
খিদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যের অভাবটা একটু বেশি দেখা দিয়েছে। তবে রামপুর গ্রামের সরকারি যে খাস জমি আছে। তা যদি বানরের জন্যে বরাদ্দ দিয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করে খাবারের অভাবটি পূরণ যায় তাহলে এরা রামপুর গ্রামের জন্য সম্পদে পরিনত হবে।
মনোরহরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম কাসেম বলেন, সরকারিভাবে বানরের খাবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার কিছু নেই। তবে স্থানীয়ভাবে চেয়ারম্যানদের এখানে অন্তর্ভূক্ত করে যদি বানরের খাবারের ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে চেষ্টা করবেন বলে জানান।
তবে স্থানীয়দের দাবি, এ রামপুরে সরকারি যে খাসজমি রয়েছে সরকারি উদ্যোগে যদি বানরের বাসস্থান ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এ এলাকাতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
এইচ মাহমুদ/টিপু
আরো পড়ুন