ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ওয়ালটন হাই-টেকের এমডির উপহার পেলেন ২ তরুণ উদ্যোক্তা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১২ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২২:৪১, ১২ জুলাই ২০২১
ওয়ালটন হাই-টেকের এমডির উপহার পেলেন ২ তরুণ উদ্যোক্তা

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মুর্শেদের শুভেচ্ছা উপহার পেলেন টাঙ্গাইলের দুই তরুণ উদ্যোক্তা। 

সোমবার (১২ জুলাই) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে ওয়ালটনের পক্ষ থেকে গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও রাইজিংবিডির উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম তাদের হাতে একটি ডিপ ফ্রিজ উপহার হিসেবে তুলে দেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কামনাশীষ শেখর, টাঙ্গাইল আদালত রোডের ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার অনুপ কুমার সাহা প্রমুখ। 

ওয়ালটনের ফ্রিজ পাওয়ায় অনেক উপকার হয়েছে বলে জানান দুই উদ্যোক্তা। দুই তরুণ উদ্যোক্তার মধ্যে মাইনুল ইসলাম পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী গ্রামে। রুবেল হাসান পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে। রুবেলের বাড়ি কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী গ্রামে। 

দুই তরুণ উদ্যোক্তাকে নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইন পেজে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ভিডিওটি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মুর্শেদের নজরে আসে। তখন দুই তরুণ উদ্যোক্তাকে শুভেচ্ছা উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

রুবেল হাসান বলেন, ‘ওয়ালটনের উপহার পেয়ে আমরা সম্মানিত। টাঙ্গাইলের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে পারবো আশা করছি।’ 

মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে আমরা ওয়ালটনের একটি ফ্রিজ দিয়ে সামুদ্রিক মাছের ব্যবসা শুরু করি। প্রথম ফ্রিজের সার্ভিস ও ফ্রিজে রাখা মাছের গুণগতমান অনেক ভালো পেয়েছি। দ্বিতীয় ফ্রিজটিও আমরা ওয়ালটন থেকে কিনেছিলাম। এতে আমাদের ব্যবসায় সাফল্য আরও বেড়ে যায়। পরে প্রথম আলোতে আমাদের তুলে ধরা হয়। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ওয়ালটন থেকে ফ্রিজ উপহার পেলাম। আমরা আনন্দিত ও ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবো।’  

ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও রাইজিংবিডির উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম বলেন, ‘দেশে মহামারি চলছে। করোনা দুর্যোগের সময়ে আমরা সবাই কষ্টে আছি। সেইসঙ্গে বেকার সমস্যা তো আছেই। করোনার কারণে বেকার সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এই সময়ে আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মিলে সামুদ্রিক মাছ বিক্রির বিষয়টি প্রথম আলোতে ভিডিও রিপোর্ট দেখে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুব খুশি হয়েছেন। তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য এমডির পক্ষ থেকে একটি ডিপ ফ্রিজ উপহার দেওয়া হলো। দুই তরুণ উদ্যোক্তাকে সাধুবাদ জানাই। তাদের সফলতা কামনা করছি। দুই তরুণ উদ্যোক্তাকে তুলে ধরার জন্য প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা।’ 

করোনার ছুটি চলাকালে উদ্যোক্তা হওয়া এই দুই শিক্ষার্থী জানান, দুইজন একইসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েছেন। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। গত বছর তারা দ্বিতীয়বর্ষে পড়ার সময় দেশে শুরু হয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দুইজনে নিজ জেলা টাঙ্গাইলে ফিরে আসেন। ছুটি ক্রমে দীর্ঘ হতে থাকে। এভাবে বসে থাকতে চাইলেন না দুই বন্ধু। শুরু করলেন সামুদ্রিক মাছের ব্যবসা। প্রথমে ব্যবসা অনলাইনভিত্তিক ছিল। অল্প সময়ে ভালো সফলতা আসে। এখন টাঙ্গাইল শহরে একটি বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘জায়ান্ট ফিশ মার্ট’। ব্যবসার পরিধি ক্রমে বাড়ছে।  

তারা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপশি তারা ভর্তি কোচিংয়ে শিক্ষকতা ও টিউশন করতেন। এতে শুধু নিজেদের পড়াশোনার খরচ নয়, পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারতেন। করোনার কারণে তাদের সেই আয় বন্ধ হয়ে যায়। তখন দুই বন্ধু বিকল্প আয়ের চিন্তা শুরু করেন। কিন্তু ব্যবসা করতে গেলে সব জায়গায় প্রতিযোগিতা। তাই এমন একটি ব্যবসা খুঁজতে থাকেন, যেখানে প্রতিযোগিতা কম। তখন তাদের মাথায় আসে এ অঞ্চলে সামুদ্রিক মাছের ব্যবসায়ী নেই। কিন্তু সামুদ্রিক মাছের চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের সহায়তায় সেখানকার মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংযোগ ঘটে। গত বছরের শেষের দিকে শুরু করেন সামুদ্রিক মাছের ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘জায়ান্ট ফিশ মার্ট’। এই নামে ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা চলতে থাকে। ভালো সাড়া পান এতে। পরে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য টাঙ্গাইল শহরের রেজিস্ট্রি পাড়ায় চালু করেছেন বিক্রয়কেন্দ্র। এখানে অনলাইনে বা টেলিফোনে অর্ডার নিয়ে হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। আউটলেটে এসেও পছন্দমত মাছ কিনতে পারেন ক্রেতারা। 

উদ্যোক্তা মাইনুল ইসলাম জানান, তিনি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। করোনাকালে টিউশন, কোচিং বন্ধ থাকায় আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এতে খুব সমস্যায় পড়েন। তারা যখন বুঝতে পারলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি দীর্ঘ হবে তখন বিকল্প আয়ের চিন্তা করতে থাকেন। সেই সময় এই ব্যবসার উদ্যোগ নেন। এতে অল্প সময়ে সফল হয়েছেন। ভালো আয় হচ্ছে। 

রুবেল হাসান বলেন, করোনাকালীন ছুটিতে ঘরে বসে না থেকে কিছু করতে চেয়েছিলেন। তখন দুই বন্ধু আলোচনা করে এই ব্যবসা শুরু করেন। ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ছুটি শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবেন। তখন সেখান থেকেও যাতে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়, সেদিকটাও খেয়াল রাখছেন। এজন্য তারা লোক নিয়োগ করেছেন। তাদের ব্যবসাটা বোঝাচ্ছেন। 

কাওছার/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়